খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ঝিনাইদহে শৈলকুপায় ২ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা
  বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল ৩ জনের
  অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার ৪৬১

২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে গুলি চালায় খুলনার ইমরান মোল্লা

কাজী মোতাহার রহমান

ডেটলাইন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল। সময় বিকেল আনুমানিক ৩টা ২০মিনিট । স্থান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র সমাজের মিছিল। পুলিশের গুলিতে রাজপথ রঞ্জিত হয়। শহীদ হন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত। ছাত্র সমাজের বুকে প্রথমে গুলি চালায় ইমরান মোল্লা, খুলনার সন্তান। তিনি তেরোখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের আবিদুর রহমান আবেদ ছেলে।স্থানীয় মোল্লা পরিবারে তার জন্ম।পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন সরকারের অধীনে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতেন। ছিলেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তার ছোট ভাই ইমরান মোল্লাকে একই বিভাগে চাকরি দেন । এক পর্যায়ে হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি পান।

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মিছিল নিয়ে নামেন। তাদের কন্ঠে শ্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ হাবিলদার ইমরান মোল্লা প্রথমেই গুলি চালায়। পরপর তার সঙ্গী পুলিশদের মিছিলের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশের তত্ত্বাবধানে শহীদদের লাশ দাফন হয়।

সেদিনে পুলিশ হাবিলদার ইমরান মোল্লার মিছিলে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছেন তার ভগ্নিপতি এম এ রউফ। তিনিও বারাসাত গ্রামের অধিবাসী ।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসল লাভ করে সরকার গঠন করে। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার শাস্তি হতে পারে- এ আশঙ্কায় হত্যাকারী পুলিশ হাবিলদার ইমরান মোল্লা চাকরি ছেড়ে দেয়। ভগ্নিপতির কাছে সে ছাত্রহত্যার কথা স্বীকার করে। ঢাকা থেকে পালিয়ে খুলনায় এসে পরিচয় গোপন করে হোটেল ডিলাক্সে চাকরী নেয়। রাতারাতি বনে যান মুসলিম লীগ কর্মী হিসেবে। ১৯৭১ সালে ইমরান মোল্লা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেয়। খুলনায় অসংখ্য বাঙালি হত্যা ও ধর্ষণের ওঠে। খুলনা শহর ও তেরখাদায় অনেক যুবককে রাজাকার হিসেবে প্রশিক্ষণ দানে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ১৭ ডিসেম্বর খুলনা শত্রু মুক্ত হলে সে পালিয়ে যায়। কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া হাটে স্থানীয় জনগণ তাকে সনাক্ত করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার নিকট আত্মীয় হাবিলদার মনিরুজ্জামান তাকে পুলিশের সোপর্দ করবে- আশ্বাস দিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে ঢাকার মিরপুর বিহারী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এখানে নতুন করে দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলে ইমরান মোল্লা । নানা রোগে-শোকে আক্রান্ত হয়ে মিরপুরেই সে মারা যায় ।

(সূত্র : এস এম কবিরুল ইসলাম রচিত স্বাধীনতা যুদ্ধে কালিয়া)

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!