সরকারিভাবে দেশে করোনাসহ অন্যান্য রোগের টিকা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই লক্ষ্যে মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ানসহ ২০ বিশেষজ্ঞকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে যাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে, তাদের শর্ত দেয়া হয়েছে। ফিরে এসে গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ভ্যাকসিন প্লান্টে ১০ বছর কাজ করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেই শর্তে বন্ড সই নেয়া হয়েছে।
ইডিসিএল সূত্র জানায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে দাক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ চলবে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের স্বতঃফুর্তভাবে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও বুঝতে পারার যোগ্যতা ও কারিগরি জ্ঞান থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্টে নিয়োগ দেয়া হবে। টানা ১০ বছর এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারিভাবে বিভিন্ন রোগের টিকা উৎপাদনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ থেকে বড় পরিমাণ (বাল্ক) টিকা এনে তা ছোট ছোট বোতলে ভরা হবে। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিদেশি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং প্রয়োজনে মানবদেহে পরীক্ষার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) মাধ্যমে দেশেই টিকা উৎপাদন করা হবে। এ সব কাজ শেষ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে।
এ ছাড়া চীনের তৈরি সিনোফার্ম টিকা দেশে উৎপাদনের জন্য গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ এবং চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, কিছু জটিলতার কারণে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। সেটা হয়তো জুন-জুলাইয়ে হতে পারে।
এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক এহসানুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব রোগ প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার হয়েছে, সেই সব টিকা আমরা দেশে উৎপাদন করতে চাই। এ উদ্দেশ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে তিন পর্যায়ে কাজ চলছে। প্রথমত, জমি অধিগ্রহণ: এই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয়ত, টিকা উৎপাদনে অর্থায়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।
‘তৃতীয়ত, কিছু জনবলকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তারাই মূলত টিকা উৎপাদন করবেন। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এই প্রশিক্ষণে অর্থায়ন করবে। এসেনসিয়াল ড্রাগস টিকা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ২০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এদের মধ্যে মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ান আছেন। এখন কতজন তারা নিয়ে যায়, এটা তাদের বিষয়। মূলত দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রশিক্ষণ একাডেমি রয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’
কত দিনের মধ্যে টিকা উৎপাদন সম্ভব– এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এহসানুল কবির বলেন, ‘টিকা উৎপাদনে অনেক সময় প্রয়োজন। তবে আমরা তিন পদ্ধতিতে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। জমি অধিগ্রহণের পর ল্যাব নির্মাণ শেষ করে মেশিনারি বিদেশ থেকে আনতে হবে। তিনটা পর্যায়ে এই কাজ করতে হবে। প্রথমে বিদেশ থেকে কাঁচমাল এনে বোতলজাতকরণ করা হবে।
‘এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে হবে ফুল মেনুফেকচারিং। এরপর টিকা নিয়ে গবেষণা। প্রথম পর্যায়ে দুই বছর সময়, দ্বিতীয় পর্যায়ে এমন আরও দুই বছর সময় লাগবে। টিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতে আরও এক বছর সময় লেগে যাবে। সব মিলিয়ে ৫ বছর সময় লেগে যাবে।’
অধ্যাপক এহসানুল কবির আরও বলেন, ‘দেশে শুধু করোনা প্রতিরোধী টিকা তৈরি হবে তা নয়, সব রোগের টিকা তৈরির কাজ করা সম্ভব হবে।’
দেশে সব ধরনের টিকা উৎপাদন হবে বলে জানান স্বাস্থ্য জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে দেশে টিকা উৎপাদনের কাজ চলমান রয়েছে। শুধু করোনা টিকা নয়। দেশে সব রোগ প্রতিরোধে টিকা উৎপাদনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই