ভাঙাচোরা সড়ক নিয়ে কষ্ট আর আক্ষেপের শেষ ছিলো না খুলনার বয়রা ও মুজগুন্নী এলাকার বাসিন্দাদের। ক্ষোভ ছিলো খুলনার প্রধান দুই হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগীদেরও। অনেক ক্ষোভ-বিক্ষোভের পর সড়কটি সংস্কার করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
ইতোপূর্বে সড়কটিতে পানি জমে থাকতো। এতে সড়কের বিটুমিন উঠে গর্ত তৈরি হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতো। এবার ২০ কোটি টাকা যাতে জলে না যায়, এজন্য সড়কের দুই পাশে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা দিয়ে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। এতো আয়োজনের পরও ৪ মাস যেতে না যেতেই সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। উঠে গেছে কার্পেটিং। পানি জমছে বিভিন্ন স্থানে।
এদিকে স্থানীয়দের শান্ত করতে গত মাসে কয়েক দফা সড়কটিতে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও সড়কটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে আবারও গর্ত তৈরি হয়েছে। নতুন সড়কে পুরাতন সেই খানাখন্দ এবং জোড়াতালি দেখে ক্ষুব্ধ ওই এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক দশকের মতো সড়কটি ভাঙাচোরা ছিলো। সড়ক মেরামতের জন্য মানববন্ধন, স্মারকলিপি, কাদাপানিতে দাড়িয়ে অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা। একপর্যায়ে ২০২১ সালে সড়কটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কেসিসি। প্রায় ৫ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কের মেরামত কাজ শেষ হয় গত মে মাসে।
বুধবার সকালে সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, কেডিএর পার্কের সামনে সড়কটির একপাশ পুরোটাই পানিতে তলিয়ে আছে। পাশে নির্মাণ করা নতুন ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর আগে সকালের সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটির বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। অথচ পাশেই নতুন ড্রেন ছিলো।
মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গর্ত মাসে তৈরি হওয়া গর্ত ভরাট করা হয়েছে। এতে মাত্র ৪ মাস আগে নির্মাণ করা সড়কটি দেখাচ্ছে তালি দেওয়া ছেড়া কাঁথার মতো। বিভিন্ন স্থানে সড়কের বিটুমিন উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটি সংস্কারের সময় কাজের মান বজায় রাখতে প্রকৌশলীদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই তারা ঠিকাদারের পক্ষ নিয়েছেন। ফলে একবছরের বৃষ্টিতেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। এখন জোড়াতালি দেওয়া হলেও সড়কটির স্থায়ীত্ব নিয়ে সবার মনেই শংকা রয়েছে।
কেসিসির নথি থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সড়কটি সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে কেসিসি। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত প্রথম ২ দশমিক ৭৫৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের ব্যয় ছিলো সাড়ে ৯ কোটি টাকা।
নতুন রাস্তা পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের (২ দশমিক ৫৪৫ কিলোমিটার) কাজ যৌথভাবে পায় আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এই অংশে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সড়কের এই অংশের নেভী স্কুলের সামনে সড়কে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্ত ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু অন্য অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে। নতুন সড়কে জোড়াতালি দেখে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
আর ড্রেনটি ৩ ভাগে ভাগ করে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় ড্রেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।
মঙ্গলবার সকালে সড়কটি পরিদর্শনের সময় কথা হয় মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তাটি নিয়ে ১০ বছর ধরে ভুগেছি। কাজ শেষ হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে থাকা, গর্ত তৈরি হওয়ায় এলাকার সবাই হতাশ। কাজটি করার সময় একটু ভালোভাবে করার জন্য ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, সড়কের ওই স্থানে বেশ কয়েকদিন বৃষ্টির পানি জমে ছিলো। এতেই সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কও মেরামত করা হয়েছে। পুনরায় যাতে পানি না জমে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়