নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। এ পরীক্ষার মূল্যায়নে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে পারদর্শিতা (নৈপুণ্য) বোঝাতে সাতটি স্কেলের প্রস্তাব করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যাতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক—সবাই শিক্ষার্থীর অবস্থান বুঝতে পারে। এখন বলা হচ্ছে, স্কেলগুলো মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট করার জন্য প্রচলিত গ্রেডও যুক্ত করা হবে।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এনসিটিবি প্রস্তাবিত সাতটি স্কেল ছিল—অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক।
সভায় উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের সাতটি স্কেল বোধগম্য করার জন্য আক্ষরিক গ্রেড দিয়ে বিষয়টি উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি কিন্তু নিউমেরিক (সাংখ্যিক) গ্রেডিং না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাতটি স্কেলের সঙ্গে এ প্লাস, এ, বি, সি ইত্যাদি যুক্ত হবে।’
বৈঠক সূত্র জানায়, এনসিটিবির উপস্থাপিত পাবলিক পরীক্ষা মূল্যায়ন কাঠামোতে তেমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। শুধু সাতটি স্কেলকে আরও সহজে বোঝার জন্য ইংরেজি বর্ণ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করার আগে ষাণ্মাষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ফলাফল দেখার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।
এর বাইরে এনসিটিবি প্রস্তাবিত লিখিত মূল্যায়নে ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে ৩৫ শতাংশ ওয়েটেজ রাখা, প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা রাখা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এখানে কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচ্ছে, অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আজকের সভায় পাবলিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগির এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। আর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়ন কাঠামো ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন দেখার পর চূড়ান্ত করা হবে।’
মাদ্রাসা ও কারিগরির বিশেষায়িত বিষয়ে আগের নিয়মে পরীক্ষা
সভা সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা আরও দুই বছর সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে। কারণ এখনো মাদ্রাসার ৫টি ও কারিগরি ৫টি বিশেষায়িত বিষয়ের পাঠ্যবই রচিত হয়নি।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম চালুর সময়ে মাদ্রাসার পাঁচটি বিশেষায়িত বিষয়ের পাঠ্যবই রচিত হয়নি। সে কারণে এবারের পরীক্ষা ধরা যাচ্ছে না। এনসিটিবি আমাদের জানিয়েছিল, তাদের আরও দুই বছর সময় লাগবে। যদিও মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত বিষয় বিশেষজ্ঞরা বিশেষায়িত বিষয়গুলোকে অক্ষুণ্ন রাখতে সুপারিশ করেছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তো পরিবর্তন আসবেই।’
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী দুই বছরও বিশেষায়িত বিষয়গুলোতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বই রচিত হলে পরের বছর থেকে একই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে।’
আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মামুন উল হক বলেন, ‘কারিগরি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বিশেষায়িত বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। আগামী দুই বছরও একইভাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশ নেবে। বই রচনার পর নতুন পদ্ধতি পুরোদমে চালু হবে।’
খুলনা গেজেট/এইচ