দীর্ঘ ১৮ বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির রাজনীতির মঞ্চে ফিরলেন দলটির সাবেক আহবায়ক ও খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আসগার লবী। গতকাল জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা মহানগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। এর মাধ্যমে রাজনীতিতে দেড় যুগের নির্বাসন ভাঙলো তাঁর।
শুক্রবার (৩০ মে) ফুলতলা উপজেলার জামিরা বাজারে জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন তিনি। দীর্ঘদিন পর তার প্রকাশ্যে কর্মসূচি অংশগ্রহণ এবং খুলনা-৫ আসনে দোয়ার আয়োজন খুলনার রাজনীতিতে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং খুলনার আহ্বায়ক ছিলেন। আমরা তাকে সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
তবে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কেন্দ্রের নির্দেশেই তাকে গতকালকের সভায় বিশেষ অতিথি করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খুলনায় দোর্দন্ড প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আলী আসগার লবী। হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীকে ২০০১ সালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। ওই বছর ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সরকার গঠনের পর বেগম খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দেন। নভেম্বর মাসে উপ-নির্বাচনে আলী আসগার লবী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে তাকে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। তখন খুলনা মহানগর বিএনপির প্রায় সব শীর্ষ নেতাই লবী বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন।
২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। ওইবছর ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে আলী আজগর লবীকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। তার সবগুলো ব্যাংক একাউন্ট, স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পদ এবং কয়েকটি গাড়ি জব্দ করে তৎকালীন সরকার। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে একটি মামলায় আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয়।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে তিনি জামিনে বের হন। এরপর থেকে বেশীরভাগ সময় তিনি দেশের বাইরে এবং ঢাকায় ছিলেন।
এদিকে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন আলী আজগর লবী। ওই সময় গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করছি’। মাঝেমাঝে দু’একবার খুলনায় এলেও দলীয় কোনো কর্মকান্ডে অংশ নেননি।
গতবছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন লবী। গত রমজানে সারা মাস ধরেই খুলনা-২ আসনের ১৬টি ওয়ার্ডে দুঃস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী এবং ঈদের আগে ঈদ বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খুলনা পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা পর্বের এই খেলা আয়োজনে সাবেক সাংসদ লবীর আর্থিক সহযোগিতা ছিল। টুর্নামেন্ট ঘিরে স্টেডিয়াম এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড টানানো হয়। এছাড়া তিনি নিজে ওই দিন ঢাকা থেকে এসে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে যান। তখন তাকে নিয়ে আবারও খুলনায় আলোচনা শুরু হয়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে আলী আসগার লবী বলেন, আমি সব সময়ই দলের নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেই। সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবারের সভায় অংশ নেওয়ার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি সেখানে অংশ নিয়েছি। এর বেশিকিছু না।
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও তো আমি কিছু জানি না। দলের কর্মী, দল যদি বলে তাহলে করবো। না বললে করবো না। কোনো সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। দল মনোনয়ন দিলে তো নিশ্চয়ই নির্বাচন করবো, যেখান থেকে দেবে সেখান থেকেই করবো।’
খুলনা গেজেট/এএজে