দেশ ব্যাপী ১৭ আগষ্ট সিরিজ বোমা হামলার ১৫ বছর পার হলেও সাতক্ষীরার ৬টি মামলার বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। সাতক্ষীরায় জেএমবি’র বোমা হামলা মামলার আসামীরা বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় ধার্য দিনে আদালতে হাজির করতে না পারায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে বলে দাবি সরকার পক্ষের আইনজীবী’র।
বর্তমানে সাতক্ষীরার অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ (১ম আদালত) শরিফুল ইসলামের আদালতে এসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আসামীরা একাধিক মামলায় দেশের বিভিন্ন জেলখানায় রয়েছে। ধার্য দিনে তাদেরকে সাতক্ষীরার আদালতে হাজির করতে না পারায় স্বাক্ষীদের বার বার ফিরে যেতে হচ্ছে। ফলে স্পর্শকাতর এসব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় প্রায় একই সময়ে বোমা হামলার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা শহরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায়, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে, বাস টার্মিনালে, খুলনা রোড়ের মোড়ে ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় (পাঁচটি স্থানে) বোমা হামলা চালানো হয়।
ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা শহরতলী ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশন আলীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ একই এলাকার জেএমবি জঙ্গি নাসির উদ্দিন দফাদারকে ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার মনিরুজ্জামান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জল, কাসেমপুুররের গিয়াসউদ্দিন, খড়িয়াবিলের বেলাল হোসেন, আসাদুল হক, খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতরখালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে। পরে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের নূর আলী মেম্বারসহ আরও তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় পরদিন ১৮ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানায় যথাক্রমে তৎকালিন উপ-পরিদর্শক একে নজিবুল্লাহ, জসিমউদ্দিন, আবু তাহের, হযরত আলী ও সফিকুল ইসলাম পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেন।
ওই সালের পহেলা অক্টোবর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম হোসেন বাদি হয়ে নাসিরউদ্দিন দফাদারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পুলিশের হাত ঘুরে সিআইডি‘র কাছে ন্যস্ত হয়। সাত মাস পর সিআইডি’র সহকারি পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুল ইসলাম ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ প্রতিটি মামলায় ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ জুন সাতক্ষীরা থেকে এ ছয়টি মামলা খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিচারের জন্য পাঁচটি মামলা সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি থেকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে এ পাঁচটি মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায় বোমা হামলা মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের বোমা হামলা মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জনের, বাস টার্মিনালের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের, খুলনা রোড়ের মোড়ের বোমা হামলা মামলায় ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলায় ১১জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
সাতক্ষীরার এই ছয়টি মামলার আসামিরা হলো, জেএমবি জঙ্গি নূর আলী মেম্বর, মনিরুজ্জামান মুন্না, বেলাল হোসেন, ইসমাইল হোসেন, আসাদুল হক, গিয়াসউদ্দিন, সাইফুউদ্দিন, খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটন ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হোসেন ওরফে রাসেল বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
এছাড়া সদর উপজেলার বাঁকাল ইসলামপুর চর এলাকার নাসিরউদ্দিন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে মারা যায়। ছয়টি মামলার অভিযোগপত্রভূক্ত ১৯ জন আসামির মধ্যে উপরোক্ত নয়জন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ তলুইগাছা গ্রামের মমতাজউদ্দিন, সাতানি গ্রামের আবুল খায়ের, পাথরঘাটা গ্রামের ফকরউদ্দিন আল রাজী ও কলারোয়া উপজেলার পটুলি গ্রামের নাঈমউদ্দিন পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও আনিসুর রহমান খোকন ২০১১ সালের জুনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। এর কিছুদিন পর তারা আবারও গ্রেফতার হলেও ফের তারা জামিন লাভ করে।
এছাড়া, জেএমবি শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর ইসলাম ওরফে বাংলাভাই ও সামরিক প্রধান আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়েছে।
জেএমবি মামলা সংক্রান্ত সরকারি দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এড. আব্দুস সামাদ জানান, সাতক্ষীরায় জেএমবি’র বোমা হামলা মামলার আসামীরা বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করছে। আদালত ও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের ধার্য দিনে হাজির করালেও সকল কারাগারে থাকা আসামীদের আদালতে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্বাক্ষ্য গ্রহণ না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম