খাদ্য ভাতা-স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ও দূর্নীতি হয়রানি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে সোমবার মধ্য রাত থেকে মোংলা বন্দরে কর্মবিরতি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকরা। নৌ-শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের ডাকে এ কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। ফলে মোংলাসহ দেশের অভ্যন্তরীণ রুটেও নৌযান চলাচল ও পন্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া মোংলা বন্দরে থাকা দেশী বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস বোঝাই কাজ হচ্ছে না।
এ বন্দরে পন্য খালাসের অপেক্ষায় বহিঃনোঙ্গর ও পশুর চ্যানেলে বর্তমানে ১৪ টি বাণিজ্যিক জাহাজ রয়েছে। আর বন্দরের পশুর নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৩ শতাধিক কার্গো, লাইটার নোঙ্গর করে কর্মবিরতির করছে তিন সহস্রাধিক নৌযান শ্রমিক।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুল হোসেন মিন্টু, গত এক বছর আগে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর করোনাকালীন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌপথে দেশের ৮০ ভাগ পণ্য পরিবহন সচল রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে মালিক পক্ষের খামখেয়ালীপনার আচরণে বাধ্য হয়ে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘নৌ-শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে’ ৫টি শ্রমিক সংগঠন এ আন্দোলনের ডাক দেয়। শতভাগ খাদ্য ভাতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, নিয়োগপত্র, সার্ভিস বুক ও পরিচয় পত্র প্রদান, মাস্টার-ড্রাইভার শীপ পরীক্ষায় ও সার্ভে রেজিষ্ট্রেশনে দূর্নীতি হয়রানি বন্ধ, শ্রমিকদের পারাপার ব্যবস্থা, চট্রগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে জাহাজ রাখার মুরিং বয়া স্থাপন সহ মেরিন ও শ্রম আইনের শ্রম ও শিল্প বিরোধী আইন স্থগিত করতে হবে। তাদের প্রস্তাবিত এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতর কর্মবিরতি পালনের কথা জানান শ্রমিক নেতারা।
এদিকে নৌযান শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতির ফলে মোংলা বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত জাহাজগুলো থেকে কোন পণ্য বোঝাই খালাস কাজ হচ্ছে না। তবে বন্দর জেটি ও গ্যাস ফ্যাক্টরীতে সামান্য কাজ হচ্ছে। মোংলা বন্দরে কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার এম ফখরুদ্দিন জানান, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৪টি জাহাজ অবস্থান করছিল। এ ছাড়া বন্দরে পণ্যবাহী আরও ৪টি বানিজ্যিক জাহাজ ভেড়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন হাওলাদার বাদশা জানান, মোংলা বন্দরে এ মুহুর্তে প্রায় ৩ থেকে ৪ শ’ লাইটারেজ জাহাজ অবস্থান করে কর্মবিরতি পালন করছে। ভোর রাত থেকেই জাহাজের পাশ থেকে সব লাইটারেজ জাহাজ সরিয়ে এনে নদীতে নঙ্গর করে রাখা হয়েছে। এসব লাইটারেজ জাহাজের কর্মচারীরা এখন অলস সময় অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকলভ’ক্ত আন্তর্জাতিক রুটসহ দেশের সব রুটে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মালিক ও সরকার নৌ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া না পর্যন্ত এ কর্মবিরতি লাগাতার চলবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
খুলনা গেজেট/এনএম