স্নিগ্ধ শান্ত প্রকৃতির মাঝে আঁকা-বাঁকা চঞ্চলা নদীর কল কল ধ্বনির নিরবতা ভেঙ্গে শহরের এক প্রান্তে ভৈরব নদীর পশ্চিম প্রান্তে খুলনা- যশোর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এটি এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন এবং খুলনা জেলার প্রথম উচ্চ বিদ্যালয়।
১৮৬৭ সালে শিক্ষানুরাগী ও প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসিন ৩ দশমিক ১৫ একর জায়গার উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় দৌলতপুর- সৈয়দপুর ট্রাস্ট-স্টেট স্কুল। পরবর্তীতে এটি পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় দৌলতপুর মাইনর স্কুল।
প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর ১৮৯৫ সালে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজ্য গবেষণা বিদ্যালয়টি “কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়” কর্তৃক স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হয়। বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি বিদ্যাপীঠ।
১৮৬৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন দৌলতপুর বাজারের ব্যবসায়ী বাবু গৌর মোহন সাহার দোকান ঘরে মাত্র ৫৪ জন ছাত্র নিয়ে বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে সাড়ে ৬ শতাধিক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। ২৬ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক তাদের মেধা এবং মননের সমন্বয়ে ঘটিয়ে ছাত্রদের পাঠদান করে চলেছেন। বিদ্যালয়টির শিক্ষার গুণগতমান খুবই প্রশংসনীয়। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা সাংস্কৃতিক চর্চা, স্কাউটিংয়েও বিদ্যালয়টির সুনাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পুরানো ৩ টি দ্বিতল, ১টি মনোরম একতলা ভবনের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ৬ তলা নতুন ১টি ভবন। ভবনগুলিতে রয়েছে মোট ৪২ টি কক্ষ। ছাত্রদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় ছাত্রদের জন্য রয়েছে অডিটোরিয়াম, বন্ধুবন্ধু কর্নার এবং পরিপাটী লম্বা একটি কক্ষে নামাজ পড়ার স্থান।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫৬ বছরে বিদ্যালয়টিতে ৩০ জন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত একটানা ৭০ বছর বিদ্যালয়টির ১২ জন প্রধান শিক্ষক ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ৭০ বছর পর ১৯৩৮ সালে আমিনুর হক নামে ১ম কোন মুসলিম বিদ্যালয়টির ১৩ তম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিদ্যালয়টিতে প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাবু অভয় কুমার সেন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩০ তম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন শহীদুল ইসলাম জোয়াদ্দার।
দীর্ঘ ১৫৬ ধরে বিদ্যালয়টি তার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গৌরব অক্ষুন্ন রেখে স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। স্বীকৃতি লাভ করেছে একটি আধুনিক যুগোপযোগী ও আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টি থেকে শিক্ষা লাভ করে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য ও স্পিকার একে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভার সদস্য সৈয়দ নওশের আলী, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ফণীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আব্দুল হামিদ, সরোয়ার জাহান, বিশিষ্ট লেখক বাঙ্গাল আবু সাঈদ , কবি ও নাট্যকার কাজী আব্দুল খালেক ও খগেন্দ্রনাথ বসু, প্রকৌশলী এস এম শহীদুল্লাহ, বিশিষ্ট অভিনেতা গোলাম মুস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ অনেক বিশিষ্ট জন এ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালী ঔপন্যাসিক বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিছুকাল বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করেছেন।