শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে মাত্র ৫-৬ দিনের মধ্যে ভারতীয় সংসদের ১৪১ জন বিরোধী জোটের সাংসদকে বহিষ্কার করাটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক লক্ষণ বলে অভিহিত করল জামাআতে ইসলামী হিন্দ। সংগঠনের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিম ইঞ্জিনিয়ার এক বিবৃতিতে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত এবং খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। এভাবে সাংসদ-শূন্য লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল পাস করিয়ে নেওয়াটা সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী। বুধবার এক প্রেস বিবৃতিতে তিনি আরও বলেছেন, পার্লামেন্টে যা চলছে সে সম্পর্কে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট চলাকালে অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে যায় গোটা দেশ। যা সংসদীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদ ভবনের নিরাপত্তায় বড় রকমের গাফিলতি তুলে ধরে। এহেন চাঞ্চল্যকর প্রেক্ষিতে বিরোধী সাংসদরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য বা বিবৃতি দাবি করায় পরপর দুদিন বহু সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। সব মিলিয়ে ৫-৬ দিনের মধ্যে মোট ১৪১ জন বিরোধী সাংসদকে শীতকালীন অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করা হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাংসদদের এই অধিকার তো সংবিধান দিয়েছে। পার্লামেন্টের বিধিতেও সরকার ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে প্রশ্ন করা এবং বিবৃতি দাবি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে সকল সাংসদকে। তারপরেও এভাবে সব নিয়ম ও অধিকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এতজন সাংসদকে পুরো অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করাটা নজিরবিহীন ও অশুভ লক্ষণ।
জামাআতে ইসলামী মনে করে, এই সাসপেনশন অন্যায়, অবৈধ ও বেইনসাফি। সরকারের কাজকর্ম ও পলিসি নিয়ে প্রশ্ন করে সংসদীয় গণতন্ত্র ও তার কাঠামোকে আরও মজবুত করে বিরোধী দলগুলো। বহুদলীয় গণতন্ত্রে এটা খুবই ইতিবাচক একটা দিক। সরকার তার কাজের জন্য বিরোধী দল তথা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। বিরোধীরা দেশ ও দশের কল্যাণে বিকল্প পথ-পন্থা এবং রূপরেখা সরকারের সামনে পেশ করে। সর্বোপরি গণতন্ত্রকে পুষ্ট করতে বিরোধীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
তাই এভাবে অবাধে ও নির্বিচারে প্রায় দেড়শো সাংসদকে সমগ্র অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করাটা সংসদীয় গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিমালাকে মূল্যহীন করার শামিল বলে মনে করছে জামাআত। এর পরিণতি সাংবিধানিক মূল্যের জন্য খুবই ভয়াবহ ও ক্ষতিকর। এভাবে পার্লামেন্টকে বিরোধী-শূন্য করে কণ্ঠ রোধ করাটা সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদের নামান্তর। বিরোধিতা ছাড়া সরকার হয় দায়বদ্ধতা-শূন্য। যেখানে সরকারের কাজকর্ম এবং সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করার মতো কেউ থাকে না। এমতাবস্থায় একটা সরকার স্বৈরাচারী ও একনায়কতন্ত্রী হতে বাধ্য।
জামাআতে ইসলামীর বর্ষীয়ান কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক সেলিম ইঞ্জিনিয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এভাবে অধিকাংশ সাংসদকে বহিষ্কার করে একাধিক কালাকানুন সহ বেশকিছু বিতর্কিত বিল আনা হবে এবং একরকম বিরোধী-শূন্য পার্লামেন্টে বিনা আলোচনায় সেগুলোকে পাস করিয়ে নেওয়া হবে – এমনই পাঁয়তারা কষছে কেন্দ্র সরকার। সেলিম সাহেবের কথায়, ক্ষমতাসীন সরকার হল সংসদীয় গণতন্ত্রের জননী তথা অভিভাবক। তাই মা কখনো ভুল-ত্রুটির জন্য সন্তানদের পরিত্যাগ করতে পারে না। সুতরাং কেন্দ্র সরকারের কাছে জামাআতের দাবি, বহিষ্কৃত সাংসদদের সাসপেনসন প্রত্যাহার করে সকলকে চলতি অধিবেশনে ফিরিয়ে নেওয়া হোক এবং সংসদের মর্যাদা, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি মেনে চলতে সকল সাংসদকে আবেদন করা হোক। এতে গণতন্ত্র স্বাস্থ্যকর হবে।