খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

১৪০ টাকা কেজির মুরগি ২২০ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দাম বেড়েছে সব ধরনের মুরগির। সরবরাহ কম আর খাদ্যের দাম বেশি থাকায় মুরগির মূল্য বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে মুরগির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে বিক্রি। ফলে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষেরা।

নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির প্রকারভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আগে যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজিতে, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। লেয়ার (লাল) আগে বিক্রি হয়েছে ২৩০ টাকা কেজিতে এখন ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ২০০ টাকা কেজির কক এখন ২৮০ টাকা, ৪৩০ টাকা কেজির দেশি মুরগি এখন ৪৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর মিস্ত্রীপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল শেখ বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ কম। আর মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। ফলে পাইকাররা মুরগির দাম বাড়িয়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ জন্য বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।

তিনি বলেন, মুরগির দাম কম থাকলে আমাদের জন্য ভালো। তখন বিক্রি বেশি হয়। বিক্রি হলে লাভও বেশি হয়। বর্তমানে মুরগির বাজার খারাপ। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে বিক্রিও। আগে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি করতাম। এখন দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা কম তাই বিক্রিও কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ মুরগি কিনছেন না।

খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী শুকুর আলী বলেন, বর্তমানে বাজারে মুরগির দাম চড়া। ১৪০ টাকার ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে ২১০ টাকায়, বিক্রি করছি ২২০ টাকায়। ২৭৫ টাকা কেজিতে লেয়ার ও সোনালী মুরগি কিনে বিক্রি করছি ২৯০ টাকা কেজি দরে। ২৬০ টাকায় কক মুরগি কিনে ২৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে।

রিকশাচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমার দেশের বাড়ি বরিশালে। বর্তমানে থাকি নগরীর মিস্ত্রীপাড়া এলাকায়। পরিবারে ৬ সদস্য। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে এই তিনজন বাড়িতে রয়েছি। রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৫০০-৫৫০ টাকা হয়। যার মধ্যে রিকশা ভাড়ার ব্যয় রয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আগে সপ্তাহে অন্তত একবার বাড়িতে মুরগি কিনে নিয়ে যেতাম। এখন দুই সপ্তাহেও জুটছে না। বর্তমানে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম অনেক। তাই কিনতেও হিমশিম খেতে হয়।

তিনি বলেন, গত ৬ মাস ধরে বাড়ি ভাড়া দিতে পারলে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ছে। কিভাবে সংসার চালাব সেই চিন্তায় দিন কাটে। ভাবছি দেশের বাড়িতে চলে যাব।

খালিশপুর বিআইডি সড়ক এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজি, মাছ, মাংসের দাম বাড়তি। আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। মাস শেষে টাকা বাচানো তো দূরের কথা ধার-দেনা করে চলতে হয়। আগে মাসে অন্তত চার দিন মুরগি বা গরুর মাংস কিনে খেতাম। এখন দুই দিন কিনে খাওয়াও মুশকিল। মুরগির দাম হঠাৎ করে বেড়েছে। মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানোর জন্য যে ব্রয়লার মুরগি, সেই মুরগির দামও ১৪০ টাকা থেকে এক লাফে ২২০ টাকায় হয়েছে।

এদিকে মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে খুলনাসহ সারাদেশে পোল্ট্রি ও ডেয়ারি শিল্পের উৎপাদিত নিরাপদ পুষ্টিকর আমিষপণ্য মুরগির ডিম, মাংস ও তরল দুধের দাম সর্বনিম্ন থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের বিভাগীয় শাখা ও খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতি।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা বলেন, খুলনাসহ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার সামর্থ্য রয়েছে খামারীদের। তাঁদের উৎপাদিত মুরগির ডিম, মাংস ও তরল দুধের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে যে ধরনের সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল তা না পেয়েও খামারিরা সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দেশের জন্য যা করেছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু চাহিদার অতিরিক্ত মুরগির ডিম, মাংস ও তরল দুধ উৎপাদন করে যথাযথ মূল্য না পেয়ে হতাশা, দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়েছে খামারি পরিবারগুলোর। এ অবস্থা নিরসনে অবিলম্বে পশুখাদ্য, ওষুধ ও বাচ্চার মূল্য কমাতে হবে।

এছাড়া তারা সরকারের কাছে সয়াবিন মিল বন্ধ, মহিষ/গরু আমদানি বন্ধ, বিদেশী বিনিয়োগের নামে বহুজাতিক কোম্পানিকে পোল্ট্রি চাষে সরকার ঘোষিত অনুমতি বাতিল, কৃষিজ-ভিলেজ ও লাইভ স্টক-এর আদলে বাজার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পশুশুমারির ব্যবস্থা করা, সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ণ, খামারিদের কৃষি ভর্তুকিসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি করেছেন।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!