ড্রেসিংরুমের আবহাওয়ায় যেন মেরু আর মরুর পার্থক্য। সফরকারী শিবির যতটা শীতল, ততটাই অস্থির স্বাগতিকদের ড্রেসিংরুম। একদিকে খুশির মেলা, অন্যদিকে উচ্ছ্বাসহীন। এক দিনের ক্রিকেট সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই দলের অনুশীলনে খণ্ড খণ্ড আরও অনেক চিত্রই ধরা পড়ে। বাংলাদেশ দলের উইকেট দেখার দৃশ্য তার অন্যতম ঘটনা। কোচিং স্টাফ, নির্বাচক ও ক্রিকেটারদের পালা করে পিচ দেখার বিষয়টি চিন্তার খোরাক দেয়। কতটা ব্যাকফুটে থাকলে এভাবে উইকেট পর্যবেক্ষণ করে স্বাগতিক দল! অথচ চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে ভাবলেশহীন ইংল্যান্ড। আসলে যেভাবে তারা মিরপুরের উইকেট জয় করে এসেছে, তাতে জহুর আহমেদের উইকেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু থাকেও না। জস বাটলাররা ভালো করেই জানেন, স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারলে জয়ের ধারাবাহিকতা রেখে শেষ করতে পারবেন বিশ্বকাপ সুপার লিগের এই সিরিজ।
ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই জাতীয় দলের ফোকাস নড়ে গেছে বাইরের কিছু ইস্যুতে। ড্রেসিংরুম নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনিই আবার বিতর্কের ক্ষতে প্রলেপ দিতে গত কয়েক দিন নিয়ম করে টিম হোটেল ও ড্রেসিংরুমে মিটিং করেছেন। বোর্ড সভাপতির ভাষায়, ক্রিকেটারদের সাহস দিয়েছেন। যদিও পাপনের দেওয়া মন্ত্র উজ্জীবিত করতে পারেনি খেলোয়াড়দের। মিরপুরে ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারও এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দেখার বিষয়, তামিম ইকবালরা চট্টগ্রামে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারেন কিনা।
ঐতিহ্যগতভাবেই চট্টগ্রামের উইকেট ব্যাট করার জন্য মিরপুরের চেয়ে ভালো। টাইগার স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথও মনে করেন, এই উইকেটে ব্যাটাররা তুলনামূলক ভালো করবেন। তাই বলে সাড়ে তিনশ বা চারশ রানের উইকেটও করা হয়নি। হেরাথ জানান, ভারত গত ডিসেম্বরে যেভাবে রেকর্ড ৪০৯ রান করতে পেরেছে, ইংল্যান্ডের পক্ষে তা করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ‘এটা কঠিন সার্ফেস। আশা করি, একই ঘটনা ঘটবে না। আমরা চেষ্টা করছি দলের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার।
এই উইকেটের সঙ্গে তুলনা করলে মিরপুরে স্পিনারদের জন্য সুবিধা বেশি থাকে।’ পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া উপাত্তও স্পিনস্বর্গ হিসেবেই তুলে ধরে মিরপুরকে। চট্টগ্রামেও পিছিয়ে থাকেন না স্পিনাররা। এই ভেন্যুতে এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ চার উইকেট সাকিবের ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আরাফাত সানি, এনামুল হক জুনিয়র, আবদুর রাজ্জাকরাই দেশের পক্ষে ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। যে একজন পেসার একটু ভালো করেছেন, তিনি ইংল্যান্ডের টিমোথি ব্রেসনান। ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ২০১০ সালের সফরে। হেরাথের কথা থেকে বোঝা যায়, কিছুটা স্লো এবং লো উইকেট পাচ্ছেন আজকের ম্যাচে।
এই ইংল্যান্ডকে স্লো উইকেট দিয়েও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ, ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই শক্তিশালী তারা। জেসন রয়, জস বাটলার, ডেভিড মালানদের পাশাপাশি মঈন আলি বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন। তিন পেসারের সঙ্গে তিনজন স্পিনার রেখে বোলিং ইউনিট সাজায় তারা। স্পিন ট্র্যাক করা হলে দুই লেগি আদিল রশিদ আর রেহান আহমেদের সঙ্গে অফ স্পিনার মঈন আলি গেম চেঞ্জারের ভূমিকা নিতে পারেন। ইংলিশ দুই লেগিকে সামলাতেই দলের সঙ্গে লেগস্পিনার রিশাদ আহমেদকে রাখা। সিরিজ শুরুর আগে থেকেই সব ব্যাটারকে নেটে টানা বোলিং করছেন তিনি। চট্টগ্রামে যোগ হয়েছেন আরেক লেগি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
স্বাগতিকরা লেগস্পিনার খেলাতে না পারলেও ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও তিনজন স্পিনার খেলাতে পারে– সাকিব, মিরাজের সঙ্গে তাইজুল। পেস বোলিং ইউনিট থেকে অধিনায়কের প্রথম পছন্দ মুস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদকে। হাসান মাহমুদ বা এবাদত হোসেনকে খেলাতে হলে ফিজকেই বিশ্রাম দিতে হবে। তবে দল সূত্রে পাওয়া খবর, ব্যাটিংয়ে একটি পরিবর্তন করার চিন্তাভাবনা ম্যানেজমেন্টের। অভিষেক হতে পারে তৌহিদ হৃদয়ের। সে ক্ষেত্রে একাদশের বাইরে চলে যেতে পারেন মিডলঅর্ডার ব্যাটার আফিফ হোসেন। পেসার তাসকিন আহমেদের হালকা চোট থাকায় তাঁর জায়গায় হাসান মাহমুদের সম্ভবনাও রয়েছে।