বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তাঁর জন্ম। তাঁর ডাকনাম ছিল কাজল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর শরীরে মারণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এরপর উন্নত চিকিৎসা নিতে তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সেখানে প্রথমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরে আবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শেষে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাঁকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সে অবস্থায়ই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। ২৪ জুলাই তাঁর গড়ে তোলা নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
হুমায়ূন আহমেদ একাধারে কথাসাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুর এক যুগ পরও এখনো তিনি তুমুল জনপ্রিয়।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট কয়েকটি চরিত্র সাহিত্যপ্রেমী মানুষ এখনো স্মরণে রেখেছে। মোহময় গদ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবন আখ্যানকে অসামান্য দক্ষতায় চিত্রিত করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় একক লেখক হিসেবে মৃত্যুর ১২ বছর পর এখনো তাঁর বই সর্বাধিক বিক্রি হয়।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
এই উপন্যাস দুটির কারণে তখনকার সাহিত্যবোদ্ধা মহলে বেশ প্রশংসিত হন তিনি। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের লেখকজীবনে নিজেকে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তায় শীর্ষে নিয়ে যান। গল্প বলার অসামান্য ভঙ্গির কারণে ‘গল্পের জাদুকর’ হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়। তাঁর লেখা গল্প-উপন্যাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারার নিঃসংকোচ বর্ণনা পাওয়া যায়। অমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও হুমায়ূন আহমেদ বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন, নির্মাণ করেছেন নাটক ও চলচ্চিত্র। শিল্পের যে মাধ্যমে তিনি হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন।
হুমায়ূন আহমেদ দুই শর বেশি উপন্যাস লিখে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘দেয়াল’, ‘বাদশাহ নামদার’, ‘কবি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘লীলাবতী’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘নৃপতি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ইত্যাদি। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলী’ ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সায়েন্স ফিকশন এবং কিশোর গল্প লিখেও তিনি দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন। গল্প ও উপন্যাসের মতো হুমায়ূন নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়। ‘আজ রবিবার’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ তাঁর জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অগণন পুরস্কার লাভ করেন। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি সেমিনারের আয়োজন করেছে। আজ বিকেল ৪টায় সেমিনারটির আয়োজন করা হয়েছে
একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনারকক্ষে। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক ড. সরকার আমিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক আহমেদ মাওলা ও অধ্যাপক সুমন রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
প্রতিবছরই হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দখিন হাওয়ায় রাত ১২টায় সন্তানদের নিয়ে কেক কাটেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। এবারও একই পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আজ সকালে নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুরে রয়েছে দোয়ার আয়োজন।
খুলনা গেজেট/এইচ