প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আজ। সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে এই বৈঠকটি হওয়ার কথা। হাইভোল্টেজ এই বৈঠকে চোখ ঢাকা-দিল্লির পর্যবেক্ষকদের।
দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু ইস্যু আলোচনার টেবিলে থাকতে পারে বলে আগেই আভাস দেয়া হয়েছিল। দুই প্রধামন্ত্রীর বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা সই হওয়ার কথা রয়েছে।
৪ দিনের ভারত সফরের উদ্দেশ্যে গতকাল সকালে ঢাকা ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট। দুপুরের আগেই প্রধানমন্ত্রী দিল্লি পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান।
ভারত সফরের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আধাঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে কীভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনা হতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া যেসব বিষয় ঝুলে আছে, সেসবে গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংসতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমস্যা হবে কিনা সে বিষয়টিও আলোচনায় ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সফর বেশ তাৎপর্য বহন করছে।
গত রোববার সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে। এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে ৭টি সমঝোতা চুক্তি সই হতে পারে। এসব চুক্তি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইন, প্রতিরক্ষা তথ্য ও সম্প্রচার। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি উঠতে পারে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে।
দীর্ঘদিন ধরেই আটকে আছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। বাংলাদেশ চায় এই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে। এইসঙ্গে তিস্তাসহ অন্য নদীর পানি বণ্টন এবং পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় ঢাকা। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমরসহ ৫৪টি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নিয়ে আলোচনার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করার বিষয়টি উঠতে পারে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে। যদিও কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় প্রেস বিফ্রিং করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সহিংসতার প্রসঙ্গটি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভারতও লক্ষ্য করছে, এখানে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। যা কাম্য নয়। সংকট মোকাবিলায় একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারি এ বিষয়েও আলোকপাত করা হয়। পানি বণ্টনের বিষয়েও আলোচনা হয়। ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানি থাকলে দুই দেশের সুবিধার ভিত্তিতে কীভাবে তা আমদানি করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং একান্ত বৈঠকেও এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে, বৈঠকের পর এক টুইট বার্তায় এস জয়শঙ্কর লিখেছেন, আজ (সোমবার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমাদের নেতৃত্বস্তরের যোগাযোগের উষ্ণতা ও পুনরাবৃত্তি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর অংশীদারিত্বের একটি সাক্ষ্য।