যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে। এর আগে সংস্থাটি জানিয়েছে, মি. ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনাটি ছিলো একটি ‘হত্যা চেষ্টা’।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে পেনসিলভানিয়ায় এক সমাবেশে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে।
গণমাধ্যমএবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার মধ্যে হঠাৎ মি. ট্রাম্প মেঝেতে বসে পড়ছেন এবং এরপর তিনি যখন দাঁড়ান তখন তার মুখের এক পাশে রক্ত দেখা যাচ্ছিলো।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর এফবিআই একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে, যেখানে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা কেভিন রোজেক বলেছেন, “আজকে আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যা হয়েছে তাকে আমরা হত্যা চেষ্টা বলছি।”
তিনি জানিয়েছেন, তাদের এজেন্টরা এখন ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং এর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে গুলি হওয়ার আগ পর্যন্ত মি. ট্রাম্পের সমাবেশের পাশের ভবনের ছাদে কেউ আছে – সেটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জানা ছিলো না।
তবে, সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য সাবেক প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের কেউ উপস্থিত ছিলো না।
ওদিকে, পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের লেফটেনেন্ট কর্নেল জর্জ বাইভেনস বলেছেন, ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা বীরত্বের পরিচয় দিয়ে বন্দুকধারীকে যথাযথ জবাব দিয়েছে।
এর মধ্যে গুলিতে আহত মি. ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তারা দুজন আগামী নভেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।
ওই নির্বাচনে তাদের উভয়ের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র রাজনৈতিক অঙ্গনে সবাইকে শ্রদ্ধার চোখে দেখার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
মি. কেনেডির বাবা রবার্ট এফ কেনেডি ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থাকার সময় গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।
আর তার চাচা জন এফ কেনেডি ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় গুলিতে মারা গিয়েছিলেন।
হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। তার নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। তার বয়স মাত্র ২০ বছর।
তিনি পেনসিলভানিয়ার বেথেল পার্ক এলাকা থেকে এসেছেন।
এলাকাটি মি. ট্রাম্প যেখানে সমাবেশ করছিলেন সেখান থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে।
বন্দুকধারী সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে।
তার পরিচয় এফবিআই তখনি প্রকাশ করেনি। তারা মূলত হামলাকারীর ডিএনএ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
হাসপাতাল ছেড়েছেন ট্রাম্প
বিবিসির যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, দুটি সূত্র তাদের নিশ্চিত করেছে যে কানে গুলি লাগার পর মি. ট্রাম্প স্থানীয় যে হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে গেছেন তিনি।
তবে, তিনি ঠিক কোথায় যাচ্ছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। বাটলারের সমাবেশের পর তার নিউ জার্সিতে যাওয়ার কর্মসূচি ছিলো।
ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন বাইডেন
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন।
তবে, তারা কী ধরনের কথা বলেছেন সেটি ওই কর্মকর্তারা বলেননি।
মি. বাইডেন একই সাথে পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোস শাপিরো এবং বাটলারের মেয়র বব ডেনডয়ের সাথেও কথা বলেছেন বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে।
এদিকে ডেলাওয়ারে থাকা প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজের কর্মসূচির পরিবর্তন করে আজ রাতেই হোয়াইট হাউজে ফিরে আসবেন।
ওয়াশিংটন থেকে বিবিসি নিউজের ব্রজেশ উপাধ্যায় লিখেছেন যে, পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা দৃশ্যতঃ নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে এবং কেউ কেউ এজন্য সিক্রেট সার্ভিসের দিকেআঙ্গুল তুলছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্প নিজে অবশ্য সিক্রেট সার্ভিস এবং অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে এবং কেউ কেউ এ ঘটনাকে ‘সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতা’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, কংগ্রেস এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করবে। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমেরিকান জনগণ সত্য জানার অধিকার রাখে।”
এদিকে, এ ঘটনার পর ‘রাজনৈতিক সমাবেশের ধরণ ভিন্ন হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যারিজোনার রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি বিগস।
বিবিসির যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা ক্রিস্টাল হাইয়েসকে তিনি বলেছেন, তার বিশ্বাস এখন থেকে রাজনৈতিক সমাবেশগুলো আর আগের মত হবে না, বরং ভিন্ন ধরণের হবে।
“আমার ধারণা আপনি এখন থেকে যখন কোন সমাবেশ করবেন তা হবে ইনডোর ভেন্যুতে, যেখান আপনার আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে,” বলছিলেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার যেখানে সমাবেশ করছিলেন সেটি ছিলো উন্মুক্ত স্থানে এবং সমাবেশস্থলের পাশে ছিলো কিছু ভবন।
রিপাবলিকান সম্মেলনে যাবেন ট্রাম্প
মি. ট্রাম্পের প্রচার দল জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে তিনি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দিবেন।
ওই সম্মেলনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
সোমবার ওই সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা, যেখানে মি. ট্রাম্প তার ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
প্রচার দল জানিয়েছে, “মি. ট্রাম্প ‘ভালো আছেন’ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, যারা হামলার প্রাথমিক জবাব দিয়েছে।”
কমলা হ্যারিসের স্বস্তি
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন ট্রাম্প গুরুতর আহত না হওয়ায় তিনি ‘স্বস্তিবোধ’ করছেন।
“আমরা তার জন্য, তার পরিবার এবং যারা আহত হয়েছে তাদের জন্য প্রার্থনা করছি,” এক বিবৃতিতে বলেছেন মিজ হ্যারিস।
“আমাদের দেশে এ ধরণের সহিংসতার কোন জায়গা নেই। আমাদের সবাইকে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজের নিন্দা করতে হবে এবং এ থেকে যেন কোন সহিংসতা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন তিনি।
কানে গুলির কথা বললেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল একাউন্টে বলেছেন, তার ডান কানের উপরের অংশে গুলি লেগেছে।
“আমি বুঝতে পারছিলাম তখনি যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। আমি শোঁ শোঁ শব্দ শুনছিলাম এবং তখনি বুলেট চামড়া ভেদ করে চলে গেলো,” মি. ট্রাম্প বলছিলেন।
“অনেক রক্ত গেছে, এরপর বুঝলাম কী হচ্ছে।”
এদিকে, পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোস শাপিরো সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক পোস্ট জানিয়েছেন, সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যেখানে সমাবেশ ছিলো সেই বাটলার এলাকা ছেড়ে গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, তিনি আনন্দিত যে মি. ট্রাম্প ভালো আছেন এবং তিনি তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলের বিবৃতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তার বাবা ভালো আছে।
“আমি মাত্রই আমার বাবার সাথে কথা বলেছি এবং তিনি ভালো আছেন। আমেরিকাকে রক্ষার লড়াই তিনি কখনোই বন্ধ করবেন না, উগ্রবাদীরা কী ছুঁড়লো, তাতে কিছু যায় আসে না,” বলেছেন তিনি।
তবে তিনি মি. ট্রাম্পের সমাবেশে ছিলেন না বলে সিবিএস নিউজ নিশ্চিত করেছে।
খুলনা গেজেট/এনএম