ছাগল একটি অতিশয় নিরীহ প্রাণী। অন্য অনেক প্রাণীর মান-সম্মান, সভ্রম থাকলেও ছাগলের সেই রকম মান-সম্মান সভ্রম নেই। কেউ কোনো বড় কাজ বা সাহসী কিছু করে ফেললে তাকে বলা হয় ‘ বাঘের বাচ্চা’। ছাগলকে নিয়ে এ-রকম কেউ কিছু বলেছে কি না জানা নেই। তবে ছাগলকে নিয়ে যে একেবারেই কিছু বলা হয় না- তা কিন্তু নয়। কোনো বোকাসোকা মানুষ একটু ভুলত্রুটি করে ফেললে- তাকে অনেক সময় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলা হয়, তুই একটা ‘ছাগল’। কেউ কেউ রামছাগলও বলেন। আবার অনেকে নাক সিটকিয়ে ‘ছাগলের বাচ্চা’ বলতেও ছাড়েন না। এই নিরীহ গোবেচারা প্রাণীটিই এখন পড়েছে বড় বিপদে!
কিছু দিন ধরে আমাদের দেশের কয়েকজন ব্যক্তির অঢেল অর্থ-সম্পদ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর মাঝখানে ঢুকে পড়েছিল ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নানান কাহিনী। এই কাহিনীর যবনিকাপাত না হতেই একটি অবোধ ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। ছাগল কাণ্ডে তিনি নিজের ছেলেকেই অস্বীকার করে বসেছেন! ভাবা যায়!
ধনী ব্যক্তিরা কোরবানির ঈদে অনেক টাকা দামের পশু কোরবানি দেন এটাতো এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সে-রকম মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ কোরবানির জন্য মাত্র ১৫ লাখ টাকার একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন। এই ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা কাহিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সরকারি চাকরজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে- তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। আর তাতেই বিপদে পড়েন তার পিতা মতিউর রহমান- যিনি এনবিআরের সদস্য। যদিও মতিউর রহমানের দাবি, ইফাত তার ছেলে নয়। এতেও মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি!
কথায় আছে ‘সখের তোলা আটআনা’। সেই সখের ছাগল কিনতে গিয়ে মুশফিকুর রহমান ইফাত তার জন্মদাতা পিতাকে হারাতে বসেছেন! আবার তথাকথিত সমালোচকদের তোপের মুখে সখের ছাগলটিও বাড়িতে নিতে পারেননি! দিতে পারেননি কোরবানি। এদিক দিয়ে তার আম-ছালা দুটোই গেল!
আবার ছেলেকে অস্বীকার করেও অতিশয় সৎ কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিপদও পিছু ছাড়ল না। এখন ছাগলকাণ্ডের জের গড়িয়েছে মতিউর রহমানের সম্পদের দিকে। তার কত সম্পদ রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নরসিংদীতে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে অনেক সম্পত্তি রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখছেন। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তার বিপুল বিনিয়োগের খবরও বের হয়েছে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হলেও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন। কিন্তু তার এই সৎ! মুনাফা অর্জনের কথা কেউ বিশ্বাস করছে না। এখন এই অবোধ ছাগলই কী মতিউর রহমানের সব কিছু খেয়ে ফেলবে? হায় রে ছাগল!
লেখক : সাংবাদিক