গাজায় যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে ‘সৃষ্টি’ এবং ‘অর্থ সহযোগিতা’ দেয়ার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের ফাতাহ গোষ্ঠীকে দুর্বল করতে হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে ইসরাইলি সরকার।
তিনি আরও বলেন, শান্তি আনার জন্য বাইরে থেকে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান চাপিয়ে দেয়া উচিত। যদিও আমি জানি হামাসকে সৃষ্টি করার অভিযোগ বার বার অস্বীকার করবে ইসরাইল।
উল্লেখ্য, প্রথম প্যালেস্টাইনিয়ান ইন্তিফাদা বা অভ্যুত্থানের পর ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইলি দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সৃষ্টি হয় হামাস। ২০০৭ সালের জুনে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। অন্যদিকে দখলীকৃত পশ্চিম তীরের আংশিক প্রশাসন থাকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে। ওদিকে ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের যেসব বর্ণনা আল জাজিরায় পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যায়, গত মাসে গাজায় কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে ইসরাইল। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক এজেন্সি সতর্ক করেছে যে, এই যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনে মানসিক ক্ষত নিয়ে বড় হবে একটি প্রজন্ম। তথ্যে দেখা যায় প্রতি এক ঘন্টায় গাজায় দু’জন করে মাকে হত্যা করছে ইসরাইল। এর মধ্যে দখলীকৃত পশ্চিমতীর জুড়ে ইসরাইলের অভিযান অব্যাহত আছে।
৭ই অক্টোবরের পর সেখানে ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, জানুয়ারির প্রথম অর্ধাংশে গাজার উত্তরাঞ্চলে মাত্র ২৯টি মানবিক সহায়তা মিশন অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল। তারা শতকরা ৯৫ ভাগ জ্বালানি এবং ওষুধ সরবরাহ দেয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নৃশংসতায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা কমপক্ষে ২৪ হাজার ৭৬২। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬২ হাজার ১০৮ জন।
কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে গোপন কারাগারে রেখেছে ইসরাইল। সেখান থেকে যারা মুক্তি পেয়েছেন, তারা বর্ণনা করেছেন তাদের সঙ্গে কি নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। অনেকে বলেছেন, তাদেরকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। একজন বলেছেন, তার পিঠে এখনও দাগ আছে। সেই দাগই বলে দিচ্ছে তিনি কি বেদনা বহন করছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলিরা আমাকে আটক করে পোশাক খুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়। আমার হাম বেঁধে ফেলা হয়। চোখ বেঁধে ফেলা হয়। তারা আমার মাথা কামিয়ে ফেলে। তাদেরকে বলি আমার স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। কাঁধে আছে প্রোস্থেটিক সমস্যা। কিন্তু তারা অব্যাহতভাবে আমাকে আঘাত করতে থাকে। আমার বাম বাহুতে সব রকম অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে অপমান করা হয়েছে। প্রহার করা হয়েছে। উপর্যুপরি মুখে থাপড়ানো হয়েছে।
ওদিকে গাজায় আন্তর্জাতিক আইন ইসরাইল অনুসরণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি বৃটেন। দেশটির সরকারের আইন বিষয়ক পরামর্শরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানির আভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। তাতে দেখা হয় ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে কিনা। এক্ষেত্রে নভেম্বরে মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরাইল থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর কর্মকর্তারা বলেন যে, তাদের হাতে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই।
খুলনা গেজেট/এনএম