যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হামলা, ভাঙচুর ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সবই দেখা গেছে। কোথাও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতি চড়াও হয়েছেন। আবার কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। রাত পোহালেই এ রকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে উপজেলার ৯টি ইউপিতে তৃতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে রায়পুর ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ও বাকি আটটিতে ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে।
রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮১টি কেন্দ্রের ৩৮৫টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ভোটের দিন সকালেই কেন্দ্রে বালেট পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে রিটানিং কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, উপজেলার ৯টির মধ্যে সাতটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেকটা চাপে রয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।
এদিকে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। তবে নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে এসে শুক্রবার রাতে জামদিয়া ইউনিয়নের আমুড়িয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ভোটে মানুষের আগ্রহে অনেকটা ভাটা পড়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টার পর প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাদে বাকি নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতোমধ্যে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে ভোটের দিন জহুরপুর, রায়পুর, নারিকেলবাড়িয়া ও দোহাকুলা ইউনিয়নে সন্ত্রাস ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শেষ মুহুর্তে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারপ্রণ।
জহুরপুর ইউনিয়নের ১৬ হাজার ৬৩৫ জন ভোটারের মন জয় করতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। তবে, আসাদুজ্জামান মিন্টুর নৌকা আর স্বতন্ত্র বদর উদ্দীন মোলার মোটরসাইকেলের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলেভোটাররা জানিয়েছেন।
বন্দবিলা ইউনিয়নে ৯জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে। মূল লড়াই হবে নৌকার সনজিত কুমার বিশ্বাস, ওয়ার্কাস পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির মনিরুজ্জামান তপনের আনারস প্রতীকের মধ্যে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২৩ হাজার ৭০৮ জন ।
রায়পুর ইউনিয়নে ছয়জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তবে লড়াই হবে নৌকার বিলাল হোসেন, আনারসের বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন ও চশমা প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হকের মধ্যে। রায়পুরে ভোটার রয়েছেন ২১ হাজার ২১৪ জন। এ ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এ ভোট গ্রহণ করা হবে।
নারিকেলবাড়ি ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তবে লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের বাবলু কুমার সাহা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকের আবু তাহের আবুল সরদারের মাঝে। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৭৫৮ জন।
ধলগ্রাম ইউনিয়নে দু’জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনারস প্রতীকের আতিয়ার রহমান সরদার। যে কারণে এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রবিউল ইসলামের বিজয় প্রায় নিশ্চিত। ধলগ্রাম ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ২১ জন।
দরাজহাট ইউনিয়নে আটজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তাদের মধ্যে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের মোহাম্মদ আলীর মধ্যে। তবে, ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেনও ভালো অবস্থানে আছেন। এ ইউনিয়নে মোট ১৫ হাজার ৪৬০ জন ভোটার রয়েপ্রণ।
বাসুয়াড়ি ইউনিয়নে পাঁচজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আমিনুর সরদারের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমানের লড়াইা হবে। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮ হাজার ২৭৯ জন।
দোহাকুলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তবে, মূল লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াহিদুররহমান আবু মোতালেবের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের অরুণ কুমার অধিকারীর। এ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮ হাজার ৮৯১ জন।
এছাড়া, জামদিয়া ইউনিয়নে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা রয়েছেন নৌকা প্রতীকের আরিফুল ইসলাম তিব্বত ও স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি নেতা এফএম আসলাম হোসেনের। এই ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮ হাজার ৯৭৫ জন।
নির্বাচনের বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। সব ইউনিয়নে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত সরদার বলেন, বাঘারপাড়ার ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন নির্বাচন শান্তিফ’র্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।