প্রথম দফায় আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১০৪ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে। এদের কেউ পাঞ্জাবের বাসিন্দা, কেউ গুজরাতের, কেউ আবার মহারাষ্ট্রের। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার হরদোরওয়াল গ্রামের বাসিন্দা জসপাল সিংহ তাদেরই এক জন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বুধবার তাদের বিমান নেমেছে পাঞ্জাবের অমৃতসরে। কেমন ছিল সেই পথের অভিজ্ঞতা? কোন পথেই বা পৌঁছেছিলেন আমেরিকায়? জানালেন জসপালেরা।
হাতে হাতকড়া, পা-ও শিকলে বাঁধা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এমন ভাবেই নাকি অমৃতসর পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছিল জসপালদের! অমৃতসর বিমানবন্দরে নামার পর বাঁধন খোলা হয়। এখানেই শেষ নয়, এর পর ভারতেও চলে একপ্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। ওই অবৈধবাসীরা অতীতে কোনও অপরাধমূলক কাজ করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের ভিতরে মোতায়েন ছিলেন পঞ্জাব পুলিশ-সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারীরা। এ ভাবেই শেষ হয় আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার দীর্ঘ যাত্রা।
বয়স ৩৬। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে এক ট্র্যাভেল এজেন্টের হাত ধরে আমেরিকায় পা রেখেছিলেন জসপাল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সব নিয়ম মেনে আইনি পথেই তাঁকে পাঠানো হবে। রফা হয়েছিল ৩০ লাখ টাকায়। সেই মতো প্রথমে ব্রাজিলে পৌঁছন জসপালেরা। সেখানে পৌঁছেই জসপাল প্রথম জানতে পারেন, তাঁর ভিসাটি বৈধ নয়। তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ওই এজেন্ট। ব্রাজিলে ছ’মাস থাকার পর অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকা পৌঁছন জসপাল। ধরা পড়ে যান আমেরিকার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে। সেই থেকে নামের পাশে জুড়ে যায় ‘অবৈধ অভিবাসী’ পরিচয়।
কোন পথে আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন ওই ১০৪ ভারতীয়ের এক সদস্য হরবিন্দর সিংহ? তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম বৈধ পথেই যাচ্ছি। প্রচুর টাকাও খরচ করেছিলাম। টাকা ধার পর্যন্ত করতে হয়েছিল। কাতার, ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া— নানা দেশ পেরিয়ে মেক্সিকোয় পৌঁছই। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকা। মাঝে বনজঙ্গল, পাহাড়পর্বত পায়ে হেঁটে পেরিয়েছি। আমাদের সঙ্গীরা কেউ পানামার জঙ্গলে প্রাণ হরিয়েছেন, কেউ পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েছেন। কোনও দিন ভাত জুটেছে, কখনও জোটেনি। শেষমেশ আমেরিকা পৌঁছই।’’
বুধবার দুপুরে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে অমৃতসরের শ্রী গুরু রামদাসজি বিমানবন্দরে অবতরণ করে মার্কিন সেনাবাহিনীর সি-১৭ বিমান। বিমানটি মঙ্গলবার টেক্সাস থেকে রওনা দিয়েছিল। এই অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ২৫ জন মহিলা এবং ১২ জন নাবালকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে কনিষ্ঠতম সদস্যের বয়স চার বছর। তবে অবৈধবাসী বলে যাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, তাঁদের উপযুক্ত নথি দেখতে চেয়েছে নয়াদিল্লি। তাঁদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই ভারতে তাঁদের গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম