শারীরিক লড়াই আর লাতিন ফুটবল যেন একে অপরের পরিপূরক! তেমনই একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দুই শক্তিশালী দল আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের মাঝে। দারুণ এক গোলে ম্যাচটিতে ফলাফল এনে দিয়েছেন তরুণ আলবিসেলেস্তে ফরোয়ার্ড থিয়েগো আলমাদা। যদিও ম্যাচজুড়ে আলোচিত দৃশ্য ছিল হাতাহাতি ও স্লেজিং। যার পরিণতি হিসেবে ইনজুরি সময়ে একটি লাল কার্ড দেখেছে আর্জেন্টিনা। যদিও তারা প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে ১-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরছে।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আজ (শনিবার) ভোরে প্রতিপক্ষের মাঠ সেন্টেনারিও স্টেডিয়ামে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। যেখানে লিওনেল মেসি ও লাউতারো মার্টিনেজরা ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়ার পর আক্রমণভাগে ত্রাতার ভূমিকা নিতে হতো হুলিয়ান আলভারেজ-নিকো গঞ্জালেসদের। তাদের মাঝেই আলো ছড়ালেন ফরাসি লিগে খেলা আলমাদা। স্বাগতিক উরুগুয়ে দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়ে তার একমাত্র গোলটিই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ইনজুরি সময়ের শেষদিকে লাল কার্ড দেখেছেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার নিকো গঞ্জালেস। উড়ে আসা বলে হাই কিক দিতে দিয়ে তিনি উরুগুয়ের এক ফুটবলারের মুখে লাথি মারায় রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান। জয় পেলেও ম্যাচজুড়ে বল দখলে এগিয়েই ছিল উরুগুয়ে। ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ম্যাড়মেড়ে, শেষদিকে হাতাহাতিতে জড়িয়ে তাতে কিছুটা প্রাণ ফেরান দুই দলের ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ধার বাড়িয়ে সফলতা পেয়েছে আর্জেন্টিনা। যদিও রক্ষণভাবে এর আগপর্যন্ত উরুগুয়ে বেশ সফল ছিল।
এর আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুই দলের সবশেষ দেখায় আর্জেন্টিনাকে তাদের মাঠেই ২-০ গোলে হারিয়ে এসেছিল উরুগুয়ে। নিজেদের ২০০০তম গোল পাওয়ার ম্যাচে লিওনেল স্কালোনির দল যেন তারই শোধ তুলল। একইসঙ্গে আগামী বুধবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাদের প্রস্তুতিটাও সেরে নিলো ভালোভাবে। যদিও এই ম্যাচের প্রথমার্ধে সেভাবে বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেনি কোনো দলই। গোলশূন্য সমতা নিয়েই আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে বিরতিতে যায়।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয়ার্ধে যে ম্যাচে কিছুটা রোমাঞ্চ ফিরছে তার বার্তাটি আসে প্রথমার্ধের শেষদিকে। সফরকারী মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ ও উরুগুয়ের মাথিয়াস অলিভেরা প্রথমে তর্কে জড়ান। এরপর দুই দল থেকে যোগ দেন কুটি রোমেরো এবং দারউইন নুনিয়েজ। পরে অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টান এসে ধাক্কা দিলে দুই দলের খেলোয়াড়রা হাতাহাতিতে জড়ান। পরস্পর তেড়ে গিয়ে হাত-পায়ের ব্যবহারে শক্তি পরীক্ষা করেছে উভয় দলই। ম্যাচের মূল আমেজটা আসে বিরতির পর।
আর্জেন্টিনা এই অর্ধের শুরু থেকেই প্রেসিং বাড়াতে শুরু করে। দ্রুত মুভমেন্ট ও পাসিংয়ে তারা বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করে। তবে বিপরীতে আর্জেন্টিনার মতো উরুগুয়ের রক্ষণও সেটি ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছিল। এরই মাঝে ম্যাচের ডেডলক ভাঙা গোলটি আসে ৬৮তম মিনিটে। আলভারেজ অনেকটা মুখস্থ এক পাসে খুঁজে নেন আলমাদাকে। এরপর আগামীর বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনা জাগানো তরুণ এই ফরোয়ার্ড দূরপাল্লার ভাসিয়ে দেওয়া শটে উরুগুয়ে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান।
এই জয়ে আগে থেকেই শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনা ১৩ ম্যাচে পেল ২৮ পয়েন্ট। সেলেসাওদের পরের ম্যাচে হারাতে পারলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে চারে অবস্থান করছে উরুগুয়ে। এ ছাড়া ইকুয়েডর ২২ এবং ব্রাজিল ২১ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে ২-৩ নম্বরে রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম