১৮ ফেব্রুয়ারি বহিরাগত কর্তৃক খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এরই মাঝে রোজা এবং ঈদের ছুটি সব মিলিয়ে ৫০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ঈদের ছুটি শেষে ১৫ এপ্রিল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই বিজ্ঞপ্তি প্রতিক্রিয়ায় কুয়েট ১৯ ব্যাচ এর অফিসিয়াল পেজ, ‘কুয়েট ১৯’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই বিজ্ঞপ্তিকে প্রহসনমূলক আখ্যা দিয়ে তা পরিহার করে ১৩ এপ্রিল হলে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
ফেসবুকের ওই পেজ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় কুয়েটের হল কমিটি, সকল ডিপার্টমেন্টের ভিপি ও সিআরদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৩ এপ্রিল নিরাপদ ক্যাম্পাসের প্রত্যাশায় আমরা আমাদের কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন করব এবং সবাই একসাথে হলে উঠবো। ঘোষণায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সকল শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ জেলা অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসে আসার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্টার প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো যাচ্ছে যে গত ১৮/২/২০২৫ ইংরেজি তারিখ সংঘটিত অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের ৯৯ তম (জরুরী) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ আছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের অপূরণীয় ক্ষতির কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ঠিক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী ও সম্মানিত অভিভাবক বৃন্দকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ করা হলো। আগামী ১৫/৪/২০২৫ ইংরেজি তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সাপেক্ষে অতিদ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও হলসমূহ খোলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল (কুয়েট) এর সকল হল থেকে রীতিমতো ইন্টারনেট ও পানির সংযোগ বন্ধ করে জোরপূর্বক তাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। হল বন্ধ থাকার কারণে খুলনার বাইরের শিক্ষার্থীরা, যাদের ভিতর অনেকের টিউশন খুলনাতে এবং অনেকের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই টিউশনি, তারা টিউশন হারাতে বসেছে। কুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হয়ে এতদিনে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার কারণে তাদের পরীক্ষা আটকে আছে বলে জানান ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসন এইসব দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েটে সন্ত্রাসী হামলার দেড় মাস হতে চললো, কিন্তু একজনকেও গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা সামান্য আয় রোজগারের জন্য ক্যাম্পাসে ফেরত গিয়ে হলে থাকতে চাইলে শিক্ষার্থীদেরকে পুলিশ দিয়ে হলে প্রবেশ করতে বাধা পর্যন্ত দেয়া হয়। সেই সাথে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোনে মেসেজ দিয়ে হুশিয়ার করা হয়, যেন তারা সন্তানকে ক্যাম্পাসে না পাঠায়।
জানা যায়, ১৯ ব্যাচ ছাড়াও ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও আটকে আছে ক্যাম্পাসের এই অচলাবস্থার কারণে। শিক্ষার্থীরা বলেন, কুয়েটিয়ানরা এখন অসহায় এবং ক্যাম্পাস খোলার প্রহর গুণছে।
কুয়েট ১৯ ব্যাচ থেকে এর আগে সম্মিলিত ভাবে হলে ঢোকার বিষয়ে একটি পোস্টও দেওয়া হয় ৭ এপ্রিল। তারপরেই সকল শিক্ষার্থীদের বাসায় এসএমএস দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/লিপু/জেএম