সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারা আর দেশপ্রেমকে সবার উপর স্থান দেয়ার শপথ নিয়ে যে অনলাইন খুলনা গেজেট যাত্রা শুরু করেছিল আজ তার দুই বছর পূর্ণ হলো। জানি না, এতদিনে খুলনা গেজেট খুলনা তথা দেশবাসীর সর্বোপরি বিশ্বে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের মনের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছে কিনা। তবে আমার দীর্ঘদিনের সংবাদকর্মি হিসেবে কাজ করার সুবাদে একথা বলতে পারি, খুলনা গেজেট এই ক’বছরে তার আদর্শ ও নীতি থেকে এক চুল সরে আসেনি। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে প্রতিটি দল, মত ও সকল নিউজ সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
খুলনা গেজেট সংবাদের ব্যাপারে যেমন নিরপেক্ষ, তেমনই এর মুক্ত ভাবনায় যে কেউ মন খুলে যে কোন বিষয় লিখতে পারেন। কারো প্রতি আঘাত না দিয়ে গ্রহণযোগ্য ও গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। এই বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাংবাদিকতা জগতের দিকপাল প্রয়াত নির্মল সেন দাদার একটা কথা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, “সংবাদপত্র শুধুমাত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ নয়, সংবাদপত্র একটি পাঠশালা। এই পাঠশালার ছাত্র হিসেবে দেশের সর্বস্তরের জনগণ সব সময় শিক্ষা নিতে পারে, কিভাবে মানুষ মানুষকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। তাই সংবাদপত্র নামক পাঠশালাকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”
একটা কথা না বললে নয়। আমি তখন সবে সাংবাদিকতা শুরু করেছি। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক চায়ের আড্ডায় দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক মরহুম হাবিবুর রহমান মিলন ভাই কয়েকজন সেই সময়কার সাংবাদিক নেতাদের দেখিয়ে বলেছিলেন। “আমরা এখানে ৮/১০ জন আছি। আমাদের প্রত্যকের পৃথক পৃথক রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে। কিন্তু আমরা যখন লেখা শুরু করি তখন আমাদের লেখার মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিফলিত হয় না। আমাদের লেখনিতে জনগণের কথা ও দেশপ্রেম থাকে।”
খুলনা গেজেট জন্মলগ্ন থেকে এই নীতিমালা মেনে চলেছে। আমরা যারা সাংবাদিকতা পেশার মানুষ, আমরা যেমন দিনের শুরুতে আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিক দেখতে চাই, তেমন ঘন্টা ঘন্টায় খুলনা গেজেট দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। বলতে লজ্জা নেই, আমরা যারা ঢাকার মিডিয়ায় কর্মরত তারা অনেকেই খুলনা গেজেটকে নিউজের সোর্স হিসেবে দেখে থাকি। খুলনা গেজেট থেকে নিউজ দেখে সেটা নতুনভাবে বানিয়ে আমাদের মিডিয়ায় পাঠিয়ে থাকি।
মোঃ মাহমুদ আহসানের সম্পাদনায় প্রকাশিত এবং গাজী আলাউদ্দিন আহমদের দিক নির্দেশনায় খুলনা গেজেট তার নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও ঐতিহ্য ধরে রাখবে বলে অগণিত পাঠক আশা করে। আজ মোজোর (Mobile Journalism) যুগে কোন সংবাদ চাপা দেওয়া যায় না বা লুকানো যায় না। নাগরিক সাংবাদিকতা এখন ঘরে ঘরে। প্রতিনিয়ত কত খবর আসে বিভিন্ন মাধ্যমে। এর থেকে আসল খবরটি বেছে নিতে হয়। চেক ক্রস চেক করতে হয়। তারপর সংবাদটি অন লাইনে যায়। এজন্য কাজ করে এক বিশাল কর্মীবাহিনী।
হলুদ সাংবাদিকতা ও গুজবের বিরুদ্ধে খুলনা গেজেটের অবস্থান শুরু থেকেই অত্যন্ত পরিষ্কার। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেছে অনলাইন নিউজ পোর্টালটি। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। আগামী দিনগুলোতে খুলনা গেজেট আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। খুলনার কথা বলবে, দেশ ও জনগণের কথা বলবে, এই প্রত্যাশা আমার।
লেখক : খুলনা প্রতিনিধি, ইউএনবি ও যুগ্ম সম্পাদক, খুলনা গেজেট
খুলনা গেজেট/এমএম