ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধু হালিমা আক্তার (ছদ্দনাম)। স্বামী একটি ছোট্ট মোটর গ্যারেজের মালিক। সেখান থেকে প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। এর ওপর রয়েছে দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। করোনাকালে কর্মহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। ঘরে যা গচ্ছিত ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে দু‘দিন আগে। এই দু‘দিন কাঁটিয়েছেন শুকনো খাবার খেয়ে। তবুও লজ্জায় কারও কাছে বলতে পারেননি তাদের অসহায়ত্বের কথা। কলেজ পড়ুয়া নিজের মেয়ের কাছ থেকে জরুরী সেবার হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এর কথা শুনে ফোন দেন।
খোঁজ নিয়ে রাতে ১০ টার দিকে একা একা খাবার নিয়ে সেখানে হাজির হন ইউএনও। তিনি এই পরিবারকে দেন ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, এক কেজি পিয়াজ ও লবন। আশ্বস্ত করেন যখন প্রয়োজন হবে ফোন দিলেই পৌঁছে যাবে খাবার।
উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের চা দোকানি ছলিম উদ্দিন। লকডাউনে তার দোকান বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ফলে খাবার সংকটে দিশেহারা তার স্ত্রী পারুলা বেগম এক প্রতিবেশির কাছ থেকে শুনে অন্যের মোবাইল দিয়ে ফোন দেন ৩৩৩ নম্বরে। সাথে সাথেই সেখানে খাবার নিয়ে হাজির হন ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা।
মহামারি করোনাকালে তানিয়া ও পারুলাদের মতো এমন অসংখ্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আর এসব কর্মহীনদের মাঝে ভরসার ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে জরুরী সেবার হটলাইন ৩৩৩ নম্বর। প্রতিদিনই এই হটলাইনে আসে অসংখ্য ফোনকল।
খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি গৃহবধু তানিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীর ছোট্ট একটি মোটর গ্যারেজ। কোনরকম সেখানকার আয় দিয়ে সংসার চলে। করোনাকালে গ্যারেজ বন্ধ রয়েছে। ফলে আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। দেখছি জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ দিচ্ছেন। লোকলজ্জার ভয়ে কারও কাছে বলতেও পারিনা চাইতেও পারিনা। বোঝেনতো ছেলে-মেয়ে কলেজে পড়ে। পরে মেয়ের কাছ শুনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়েছিলাম। সাথে সাথেই ইউএনও সাহেব নিজে এসে রাতের বেলা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জরুরী সেবার এই হটলাইনে প্রতিদিন অসহায়দের ফোনকল আসে। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৩৩৩ নম্বরে ফোনকল এসেছে ১৬৯ জন অসহায় নারী-পুরুষের। এর মধ্যে পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকায় শুধু একজন নারীকে দেওয়া হয়নি খাদ্য সহায়তা। বাকি ১৬৮ জনকে দেওয়া হয়েছে এই সহায়তা।
ইউএনও সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, প্রতিদিনই হটলাইনে ফোনকল আসে। সাথে সাথেই খোঁজ নিয়ে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কেওবা অফিসে এসে নিয়ে যান। আবার অনেকের বাড়িতে গিয়েও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। হটলাইনে ফোন দেওয়া অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে এদের মধ্যে অনেকে মধ্যবিত্ত পরিবারও রয়েছেন। যারা লোকলজ্জার ভয়ে কারও কাছে সহায়তা চাইতে পারেন না। তাদের গোপনে এসব সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে তাদের সম্মানও বাঁচে আবার অসহায়ত্বও দুর হয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত হটলাইনে ফোন আসা প্রায় শতভাগ মানুষকে দেওয়া হয়েছে এই খাদ্য সহায়তা বলেও তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/ টি আই