খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

হরিণাকুণ্ডুতে সরকারি দামে মিলছে না ভোজ্য তেল

মোস্তাক আহাম্মেদ, হরিণাকুণ্ডু

বাজারে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি যেন থামছেই না। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যেই নেওয়া হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও অধিক। আর বেশি দাম না দিলে মিলছে না তেল। নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। ফলে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মাথায় হাত উঠেছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের।

ইতোমধ্যে সুযোগ বুঝে অসাধু ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। হাজার হাজার লিটার তেল মজুত করে বাজারে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম সংকট। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে একের পর এক প্রশাসনের অভিযান চললেও কাজে আসছে না কিছুতেই। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থা চলছে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা জুড়ে।

জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের খুচরা মূল্য ১৬৮টাকা, পাঁচ লিটারের দাম ৭৯৫টাকা, খোলা তেল প্রতি লিটার ১৪৩টাকা এবং পামওয়েল ১৩৩টাকা। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া এই দামে কিছুতেই মিলছে না তেল। প্রতি লিটার বোতলজাত তেলের দাম ঠিক থাকলেও বেশিরভাগ দেকানেই মিলছে না সেটা ৷ সেক্ষেত্রে খোলা তেলের দাম নেওয়া হচ্ছে লাগামহীন। অনেকটা প্রকাশ্যেই তা বিক্রি হচ্ছে ১৭৩-১৭৫ টাকা দরে। আর পামওয়েল বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা দরে।

শনি ও রোববার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে দেখা যায়, গ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাদের দোকান থেকে সরিয়ে ফেলেছেন বোতলজাত সয়াবিন তেল। খোলা তেল ছাড়া নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। আর সেটি বিক্রি করা হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া দরে। শহর অঞ্চলেও একই অবস্থা। ক্ষুদ্র ও পাইকাররা একে অপরের প্রতি দায় চাপিয়েই যেন পার। তাদের দাবি, মোকামে দাম বেশি তাই তাদের কিছু করার নেই।

উপজেলার কুলবাড়িয়া এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের কাছে অধিক দামের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইকারদের কাছে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও বা মাঝে মাঝে কিছু তেল পাচ্ছি তাও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তার দাবি, তারা প্রতি কেজি খোলা তেল ১৭২ টাকা দরে এবং পামওয়েল ১৫৮টাকা দরে মোকাম থেকে কিনছেন। এর সাথে রয়েছে পরিবহন ব্যয়। একই দাবি করেন ওই বাজারের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানও।

তিনি বলেন, মোকামে দাম বেশি তাই আমাদের কিছু করার নেই। প্রয়োজনে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিব। কারণ বেশি দামে কিনে কোনো ব্যবসায়ী তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না।

শহরের হাসপাতাল মোড়ের পাইকার ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম দাবি করেন, আমি খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। অধিক দামে কিনে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে আবার গুনতে হচ্ছে জরিমানা। তাই এখন বোতলজাত তেল বিক্রি করছি।

ক্রেতা ও সচেতন মহলের দাবি, দাম কমাতে হলে ভাঙতে হবে সিন্ডিকেট। বাড়াতে হবে বাজার তদারকি। নিয়মিত করতে হবে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের অভিযান। মোজাম্মেল হক নামে শহর এলাকার এক ক্রেতা বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ। বোতলের চেয়ে খোলা তেলের দাম অনেক কম তাই আমার সংসারে বহু বছর ধরে এই তেল ব্যবহার করি। আজ তেল কিনতে গিয়ে ১৭৫ টাকা কেজি চাইলে তা না কিনে ১৬২টাকা দিয়ে পামওয়লে কিনেছি।

আসাদুজ্জামান আলম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, সরকার তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেই দামে তেল মিলছে না৷ দোকানীদের একটু মানবিক হওয়া দরকার । বাজারের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে তদারকি বাড়ানোর কথাও বলেন এই শিক্ষক। জানতে চাইলে ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাতদিন আমাদের অভিযান চলছে। বেশি দামে তেল বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও সুস্মিতা সাহা বলেন, আমরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছি। যেসব ব্যবসায়ী বেশি দামে তেল কেনার কথা বলছেন তাদের পাকা রশিদ আছে কিনা আমরা সেটিও যাচাই করছি। ইতোমধ্যে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানেৎ রয়েছে প্রশাসন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!