ঘরের ভেতর চুপটি করে বসে আছি। কিন্তু মন অস্থির। সবসময় কী হয় কী হয় একটা ভাব। এখন পৌনে এগারোটা। প্রবল তাণ্ডবের মাঝখানে আমরা।
আর ভোর রাত থেকে এমন একটা ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী হচ্ছি যা আগে কখনও দেখিনি। ধরতে গেলে প্রায় সমুদ্রের ধারেই আমাদের বালেশ্বর শহর। আধঘণ্টা গেলেই চাঁদিপুর। এর আগে অনেক ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী হয়েছি। কিন্তু এরকমটা দেখিনি।
কাল রাত ১১টা থেকে বালেশ্বরে কারেন্ট নেই। বিপদ এড়াতে প্রশাসনই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছে। ফলে বাড়ির ভেতর পুরনো পরিবেশ। মোমবাতি, হ্যারিকেন। পাওয়ার ব্যাকআপ ব্যবহার করছি না। কতক্ষণ কারেন্ট আসবে না তো জানি না।
রাত থেকেই বলতে গেলে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। রাত ২ টো নাগাদ শুতে গিয়েছি। তখনও হাওয়া ছিল। তবে ততটা নয়। সাধারণ ঝড়ের মতো। কিন্তু ভোরে যেটা হল অদ্ভূত। সাড়ে ৫টায় প্রবল আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। কাছেই একটা বড় গাছ উপড়ে গেল মড়মড় শব্দে। মনে হল প্রলয় হয়ে গেল। আমরা সবাই ধড়মড়িয়ে উঠে পড়লাম। তারপর থেকে আর কেউ ঘুমোইনি।
ভোরবেলা থেকেই প্রবল ঝড়ের আওয়াজ তো ছিলই। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ সবকিছু থেমে চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বোধহয় সব থেমে গেল। তারপরই বিকট শব্দে আবার ঝোড়ো হাওয়া শুরু হচ্ছে। জানলা কপাট বন্ধ। তবু ঠকঠক করে কেঁপে উঠছে বারবার। সবকিছু কাঁপিয়ে যেন সর্বগ্রাসী হয়ে এগিয়ে আসছে ইয়াস। সব মিলিয়ে এই আবহে বুকে কাঁপন ধরে যাচ্ছে।
বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় এখন এক কোমর জল। কিছুটা দূরে রামেশ্বর মন্দিরের কাছে যে নিকাশি নালা রয়েছে, সেটা উপচে গিয়েছে শুনলাম। আমাদের বালেশ্বর ছোট শহর। আশপাশে বহু গাছপালা পড়ে গিয়েছে। বালেশ্বর রেল স্টেশনের পাশে মালগুদামের কাছে বেশকিছু ঝুপড়ি ভেঙে গিয়েছে। ৬ বছরের একটা বাচ্চা গাছ পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে। জানি না, আরও কত খারাপ খবর শুনতে হবে।
শহরের রাস্তাগুলোও গাছ ভেঙে পড়ে জায়গায় জায়গায় বন্ধ। বালেশ্বর সংযোগকারী দুটো জাতীয় সড়ক ৫ এবং ৬০ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। কেউই বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছে না। দরজা জানলা খোলা যাচ্ছে না। অবশ্য তার প্রশ্নও নেই।
ল্যান্ডফল চলছে। ঝড়ের তাণ্ডবও চলছে পাল্লা দিয়ে। ভাবছি যাদের বাড়ির চাল উড়ে গেল তারা আরও কয়েক ঘণ্টা কী ভাবে কাটাচ্ছে, কোথায় কাটাচ্ছে। আনন্দবাজারের সৌজন্যে।
খুলনা গেজেট/এনএম