মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারত-
মদিনা মানে শহর। মদিনার পূর্বনাম ছিল ইয়াসরিব। ইয়াসরিব অর্থ অলক্ষুণে বা কুলক্ষণে। রাসুলে কারিম ﷺ এর হিজরতের পর এই ইয়াসরিবের নাম পরিবর্তন করে এর নতুন নামকরণ করা হয় ‘মাদিনাতুন নবি’ বা ‘নবির শহর’। সংক্ষেপে বলা হয় মদিনা। আরবিতে বলা হয় ‘মদিনা মুনাওয়ারা’ তথা ‘আলোক শহর’ বা আলোকিত নগরী। মদিনা দারুল হিজরাহ বা হিজরত ভূমি। মদিনায় যাওয়া, নবিজি ﷺ এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য অন্যতম সৌভাগ্যের বিষয়।
নবি করিম ﷺ এরশাদ করেন,
مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي
যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করেছে, আমার শাফাআত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গিয়েছে। -বায়হাকি, শুআবুল ইমান, হাদিস-৩৮৬২। অপর এক হাদিসে হুজুর ﷺ বলেন-
من زارَني بعدَ مَماتي فكأنَّما زارَني في حياتي
যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার কবর জিয়ারত করল, সে কেমন যেন আমার জীবিত থাকা অবস্থায় আমার সাক্ষাৎ লাভ করল। -আল ফারকু বাইনাল ইবাদাত, পৃ. ৮৬
আমাদের প্রিয় নবি ﷺ যখন দ্বিনের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন, তখন ‘আল আমিন’ বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত-খ্যাত হজরত মুহাম্মদ ﷺ এবং তাঁর অনুসারী সাহাবাগণকে হিজরত বা স্বদেশ ত্যাগ করতে হয়। প্রথম পর্যায়ে হিজরত হয়েছিল হাবশা ও আবিসিনিয়ায়। নবুয়তের এগারোতম বছরে ছয়জন ইয়াসরিব নেতার আকাবার প্রথম বাইআতের পর পরের বছর আকাবার দ্বিতীয় বাইআতে বাহাত্তর জন ইয়াসরিববাসীর অংশগ্রহণ ও হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের রা. কে প্রথম মুআল্লিম হিসেবে প্রেরণ। পরবর্তী সময়ে আউছ ও খাজরাজ গোত্রের শত শত বছরের দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে স্থানীয় জনগণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নবুয়তের তেরোতম বছরে রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় হিজরত করেন। নবিজি ﷺ এর মদিনা তথা ইয়াসরিবে আগমনে স্থানীয় সব ধর্মবিশ্বাসের ও সব গোত্রের সব অধিবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁকে শান্তির দূত ও অভিভাবক হিসেবে সানন্দে মেনে নেয়। ইয়াসরিবের মনস্তাত্ত্বিক অমঙ্গল দূর করতে মহানবি ﷺ প্রথমেই এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দিলেন ‘মদিনা’ অর্থাৎ মহানগর। এর উপাধি দেন তয়্যেবা, যার অর্থ উত্তম ও পবিত্র। জনসাধারণ বলত ‘মদিনাতুর রাসুল’ বা ‘রাসুল নগর’।
নবিজি ﷺ মদিনায় যে প্রধান মসজিদটি নির্মাণ করেন, এর নাম ‘মসজিদে নববি’, যা মদিনা শরিফ নামেই পরিচিত।
এই মসজিদে একাধারে ৪০ (চল্লিশ) ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে নবি করিম ﷺ বলেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ: مَنْ صَلَّى فِي مَسْجِدِي أَرْبَعِينَ صَلَاةً، لَا يَفُوتُهُ صَلَاةٌ، كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَنَجَاةٌ مِنَ الْعَذَابِ، وَبَرِئَ مِنَ النِّفَاقِ
যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরওয়ানা লিখা হয় এবং সে নিফাক (মুনাফেকি) ও জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত পাবে। -মুসনাদে আহমদ, হাদিস-১২৫৮৩
হাদিসটি যদিও দুর্বল। কিন্তু ফজিলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাই যদি সুযোগ থাকে তাহলে মসজিদে নববিতে একাধারে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হবে। কিন্তু এটাকে জরুরি মনে করা যাবে না।
পবিত্র মক্কা শরিফের পরই এটি শ্রেষ্ঠ স্থান। মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে যাঁরা মদিনা শরিফে গেলেন তাঁদের বলা হয় ‘মুহাজির’। মদিনাবাসী সাহাবি যাঁরা মুহাজিরদের সাহায্যকারী হয়েছিলেন তাঁদের বলা হয় ‘আনসার’। মদিনা শরিফ রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আশ্রয়ভূমি; প্রেম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের অনুপম স্থান এবং সত্যনিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণতার অদ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র। মদিনাবাসীর ব্যবহার অতি মধুর, তাঁদের বাক্যালাপ অতি মিষ্ট ও তাঁদের সঙ্গ অতি পবিত্র। ইসলামে আনসার ও মুহাজিরদের বিশেষ সম্মান রয়েছে। শান্তিধাম মদিনায় প্রিয় নবিজি ﷺ এর কবর বা মাকবারা অবস্থিত। একে মাকবারা শরিফ বা রওজা মোবারক বলা হয়। মদিনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান নবীজির রওজা শরিফ। হজরত আয়িশা রা. এর হুজরার মধ্যে তাঁর পবিত্র মাকবারা শরিফ অবস্থিত। তাঁরই পাশে হজরত আবুবকর রা. ও হজরত উমর রা. এর মাকবার। এটি বর্তমানে মসজিদে নববির অন্তর্গত। মদিনা মুসলমানদের প্রাণের ভূমি। মদিনা হলো নবিজির শহর, শান্তির নগর। মসজিদে নববির পশ্চিম পাশের প্রবেশপথকে বাবুস সালাম বলা হয়। এই দরজা দিয়ে মসজিদে নববিতে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদে নববির পূর্ব পাশের বহির্গমন দরজাকে বাবে জিবরাইল বলা হয়। এখানে হজরত জিবরাইল আ. ওহি নিয়ে এসে প্রায়ই অপেক্ষা করতেন। তাই এই নাম হয়েছে।
মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারতের কিছু আদব-
১. মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারতের সময় রসুল ﷺ এর পবিত্র রওজা ও মসজিদে নববিতে নামায আদায়ের ফজিলত অর্জনের নিয়ত করে নিবে।
২. মদিনা মুনাওয়ারার পুরো সফরে এমন আগ্রহ ও আবেগ থাকা চাই, যেমন কোন প্রেমিক আপন প্রেমাস্পদের সাথে মুলাকাতের সময় অন্তরে অনুভব করে। আর যত মদিনা নিকটবর্তী হবে, তত অন্তরে এই অনুভতি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সফরের মধ্যে না’তে রাসুল ﷺ ও রসুলের শানে মনে মনে বিভিন্ন শের পাঠ করা যেতে পারে, যেন অন্তরে আবেগ বৃদ্ধি পায়।
৩. মদিনা মুনাওয়ারা সফরে উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে জবানে রসুল ﷺ এর নাম ও অন্তরে তাকে স্মরণ করা এবং বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়া চাই। আর অবশ্যই অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা চাই।
৪. যখন মদিনা মুনাওয়ারা প্রবেশ করবে তখন গোলাম তার মনিবের নিকট যেমন কাঁচুমাচু ভাব প্রকাশ করে ঠিক তেমনি অত্যন্ত খুশু-খুজু ও নমনীয়তা প্রকাশ করবে।
শহরে প্রবেশের সময় এই দুআ পাঠ করবে-
﴿رَّبِّ أَدۡخِلۡنِی مُدۡخَلَ صِدۡقࣲ وَأَخۡرِجۡنِی مُخۡرَجَ صِدۡقࣲ وَٱجۡعَل لِّی مِن لَّدُنكَ سُلۡطَٰنࣰا نَّصِیرࣰا﴾
হে পালনকর্তা! আমাকে সত্যরূপে দাখিল করুন এবং আমাকে সত্যরূপে বের করুন এবং আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য দান করুন। -সুরা ইসরা, আয়াত-৮০
৫. রসুলুল্লাহ ﷺ এর রওজার সামনে দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সাথে এভাবে সালাম পেশ করা-
اَلصَّلاَةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللّٰهِ،
اَلصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا حبيبَ اللّٰهِ،
اَلصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَيْرَ خَلْقِ اللّٰهِ
৬. নবি করিম ﷺ এর প্রতি সালাম পেশ করার পর হজরত আবু বকর রা. এর প্রতি এভাবে সালাম পেশ করবে-
السلام عليك يا خليفة رسول الله، السلام عليك يا وزير رسول الله، السلام عليك يا صاحب رسول الله في الغار، جزاك الله عن أمة محمد صلى الله عليه وسلم خير الجزاء
৭. এরপর আরেকটু সামনে এগিয়ে হজরত উমর রা. এর প্রতি এভাবে সালাম পেশ করবে-
السلام عليك يا أمير المؤمنين يا سيدنا يا عمر الفاروق، السلام عليك يا عز الإسلام و المسلمين، جزاك الله عن أمة محمد صلى الله عليه وسلم خير الجزاء
সালাম প্রদান শেষে যদি সম্ভব হয়, কিবলার দিকে ফিরে রসুল ﷺ এর উসিলায় আল্লাহ তায়ালার কাছে মাগফিরাত, দ্বিন ও দুনিয়ার সফলতা কামনা করে দুআ করবে।
কিন্তু সাবধান! রওজার দিকে ফিরে হাত উঠিয়ে দুআ করা কিংবা রওজার দিকে ফিরে সিজদা দেওয়া ইত্যাদি সম্পুর্ণরূপে বর্জন করবে। কেননা তা শির্কতুল্য অপরাধ।
মসজিদে নববির সংক্ষিপ্ত পরিচয়-
রওজা শরিফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসুলে করিম ﷺ এর মিম্বার পর্যন্ত স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। মসজিদে নববিতে রাসুলে করিম ﷺ যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজের ইমামতি করতেন, সে মিহরাবকে মিহরাবুন নবী বলা হয়। এখানে হজরত জিবরাইল আ. যে স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন, তথাকার মিহরাবটি মিহরাবে জিবরাইল বা হজরত জিবরাইল আ. এর মিহরাব নামে পরিচিত।
মসজিদে নববির রওজাতুল জান্নাতে সাতটি বিশেষ ঐতিহাসিক খুঁটি বা খাম্বা রয়েছে।
১. উস্তুওয়ানা হান্নানা-
মিম্বারে নববির ডান পাশে খেজুরগাছের গুঁড়ির স্থানে নির্মিত স্তম্ভের নাম উস্তুওয়ানা হান্নানা। প্রথম দিকে হুজুর ﷺ একটি খেজুরগাছের খাম্বার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জুমার দিনে খুতবা দিতেন। যখন মিম্বার বানানো হলো, তখন হুজুর ﷺ মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা ও বয়ান করতেন। এই খাম্বা হুজুর ﷺ এর বিচ্ছেদের কারণে এমন করে কান্নাকাটি শুরু করে যে, মসজিদের সকল লোক স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি মিম্বার থেকে নেমে এসে খাম্বার গায়ে হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিলে সে শান্ত হয়। পরে সে খাম্বাটিকে দাফন করা হয়।
২. উস্তুওয়ানা আবু লুবাবা-
এটা সেই খুঁটি যেখানে হজরত আবু লুবাবা রা. নিজেকে বেঁধে রেখেছিলেন, পরে যখন উনার তাওবা কবুল হয়, দীর্ঘ ৫০ দিন পর রসুলুল্লাহ ﷺ তাকে মুক্ত করেন।
৩. উস্তুওয়ানা উফুদ-
উফুদ হলো ওয়াফদের বহুবচন, এর মানে হলো প্রতিনিধি। যেখানে বসে রাসুলে কারিম ﷺ দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতেন, সেখানকার খুটির নাম উস্তুওয়ানা উফুদ।
৪. উস্তুওয়ানা হারস-
হারিস অর্থ পাহারাদার। হিজরতের পর ১ম কয়েক বছর যেখানে দাঁড়িয়ে হজরত আলি রা. নবিজি ﷺ কে পাহারা দিতেন। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রসুল ﷺ এর হিফাজতের ব্যাপারে ওয়াদা করা হয়, তখন এই পাহাদারী মুলতবি করা হয়।
৫. উস্তুওয়ানা জিবরিল-
এটা ঐ স্থান যেখানে সাধারণত হজরত জিবরিল আ. নবি করিম ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন।
৬. উস্তুওয়ানা সারির-
এখানে রসুল ﷺ ইতিকাফের সময় অবস্থান করতেন।
৭. উস্তুয়ানা আয়িশা-
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত।’ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কিরাম রা. বিশ্বনবির জীবদ্দশায় চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর হজরত আয়িশা রা. তাঁর ভাগ্নে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. কে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এই স্তম্ভটি উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর।
* মদিনা মুনাওয়ারা অবস্থানকালে মসজিদে নববিতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার ইহতিমাম করবে।
রসুল ﷺ এরশাদ করেন-
صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ
অর্থাৎ মসজিদুল হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় করা অপরাপর মসজিদে এক হাজার নামাজের চেয়ে উত্তম। -সহিহ বুখারি, হাদিস-১১৯০
অপর এক রেওয়াতে এসেছে-
وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاَةٍ
আমার মাসজিদ তথা মসজিদে নববিতে এক নামাজ পঞ্চাশ হাজার নামাজের সমতুল্য। -সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস-১৪১৩
মদিনায় কিছু স্থান জিয়ারত করা মুস্তাহাব-
(মদিনার কবরস্থান ‘বাকিউল গরকদ’)
এখানে দশহাজারের বেশি সাহাবা কেরাম রা. কে দাফন করা হয়েছে। এখানে দাফনকৃত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবি হলেন-
০১. হযরত উসমান রা.
০২. হযরত খাদিজা ও মাইমুনা রা. ব্যতীত নবিজি ﷺ এর অন্য সকল স্ত্রীগণ
০৩. হজরত ফাতেমা রা.
০৪. হজরত ইবরাহীম রা. (নবিজি ﷺ এর ছেলে)
০৫. হজরত রুকাইয়্যা রা. ( নবিজি ﷺ এর মেয়ে)
০৬. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা.
০৭. হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.
০৮. হজরত সা‘দ ইবনে আবি ওক্কাস রা.
০৯. হজরত আব্বাস রা. (নবিজি ﷺ এর চাচা)
১০. হজরত হাসান ইবনে আলি রা.
১১. হজরত ইমাম মালেক রাহ.
এছাড়াও আল্লাহর আরো অনেক প্রিয় বান্দা এখানে শায়িত আছেন। -মুআল্লিমুল হুজ্জাজ পৃ. ৩২৬
(শুহাদায়ে অহুদের কবর ও অহুদ পাহাড়)
মদিনা থেকে উত্তর দিকে প্রায় তিন মাইল দূরে অহুদ পাহাড় অবস্থিত। এই পাহাড় সম্পর্কে নবীজী ﷺ বলেছেন, ‘অহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাকে ভালোবাসে এবং আমিও তাকে ভালোবাসি’ । তৃতীয় হিজরিতে এই পাহাড়ের পাদদেশে মক্কার মুশরিকদের সাথে অহুদ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবায়ে কেরাম রা. শাহাদাত বরণ করেন। বিশেষ করে হযরত হামজাহ রা. কে এই যুদ্ধে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহিদ করা হয়। অহুদের শহিদগণের কুরবানির কারণেই আজ আমরা ইসলাম পেয়েছি, ইমানদার হতে পেরেছি। তাই তাঁদের প্রতি আমাদের সীমাহীন ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা পোষণ করা উচিত। তারা যেমন দ্বিনের জন্য জান কুরবান করে দিয়েছেন, আমাদেরও তাঁদের মতো দ্বিনের জন্য ত্যাগ ও কুরবানি করা দরকার।
(মসজিদে কুবা)
মদিনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় দুই মাইল দূরে মসজিদে কুবা অবস্থিত। এটাই পৃথিবীর বুকে মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম মসজিদ। নবিজি ﷺ হিজরতের সময় মদিনায় প্রবেশের পূর্বে এই এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি সাহাবায়ে কেরাম রা. কে নিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদে আকসার পর এই মসজিদের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন-
الصَّلاَةُ فِي مَسْجِدِ قُبَاءٍ كَعُمْرَةٍ
মসজিদে কুবায় নামায আদায় করলে ‘উমরা করার সমান নেকি পাওয়া যায়। -জামে তিরমিজি, হাদিস-৩২৪
(মসজিদে কিবলাতাইন)
মদিনায় আসার পরও কিছু দিন মসজিদে আকসা কিবলা ছিল। কিন্তু নবিজি ﷺ কামনা করছিলেন যেন কাবা শরিফকে কিবলা বানানো হয়। নবিজি ﷺ এর আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা বাইতুল্লাহকে মুসলিম উম্মাহর কিবলা ঘোষণা করলেন। কিবলা পরিবর্তনের ঘটনা এই মসজিদে ঘটেছিল। এ কারণে এই মসজিদে দুইটি মিহরাব, একটি বাইতুল্লাহর দিকে আরেকটি মসজিদে আকসার দিকে। এছাড়াও মদিনায় জিয়ারাতযোগ্য আরো অনেক মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। কোনো অভিজ্ঞ লোকের মাধ্যমে জেনে নিয়ে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে সে সব স্থানেও জিয়ারাহ করা যেতে পারে। কিন্তু সব সময় খেয়াল রাখতে হবে ঘুরতে গিয়ে যেন মসজিদে নববির জামাত ছুটে না যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হজ্জে মাবরূর ও রসুলুল্লাহ ﷺ এর শাফাআত নসিব করুন!
লেখক : ইমাম ও খতিব (অ.দা.), কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।
খুলনা গেজেট/এনএম