মিনায় অবস্থানের মাধ্যমে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। হজযাত্রীরা আজ ৮ জিলহজ (৪ জুন) জোহর থেকে আগামীকাল ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করে মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। ফজরের নামাজ আদায় করার পর তারা রওনা দেবেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে।
মঙ্গলবার রাতে মক্কা থেকে হজযাত্রীরা তাঁবুর শহর বলে পরিচিত ঐতিহাসিক মিনার উদ্দেশে রওনা হন। তারা মক্কায় নিজ নিজ রুম থেকে হজের ইহরাম বেঁধে মিনায় পৌঁছান। মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। হজযাত্রীরা এখানে তাকবির, তাসবিহ, দোয়া এবং কোরআন তিলাওয়াতে সময় কাটান।
পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে পাঁচ দিন। তার মধ্যে আরাফাতের দিবসকে (৯ জিলহজ) ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে ৯ জিলহজ (বৃহস্পতিবার) ভোর থেকেই হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। তাদের সমস্বরে উচ্চারিত ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের আকাশ-বাতাস। দুপুরে হজের খুতবা শুনবেন তারা। তারপর এক আজানে হবে জোহর ও আসরের নামাজ। সূর্যাস্তের পর তারা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন মুজদালিফার পথে। সেখানে আবার তারা এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। বৃহস্পতিবার রাতে মুজদালিফায় তারা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন।
এ সময় তারা মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এরপর শুক্রবার সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় প্রতীকী বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার সাঈ (চক্কর) করবেন। এরপর আবার ফিরে যাবেন মিনায়। এর পরদিন এবং তার পরদিন অর্থাৎ টানা দুই দিন দ্বিতীয় ও ছোট শয়তানকে পাথর মারার মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
সৌদি আরব জানিয়েছে, এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী মক্কায় উপস্থিত হয়েছেন। আগামী সাত দিন হাজিদের মিনা-আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় উন্নত মানের মেট্রো সার্ভিস দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ ট্রেন ৫ হাজার বার আসা-যাওয়া করবে। সড়ক নিরাপত্তায় প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তাকে স্ক্যান করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
আরব নিউজ বলছে, আল মাশায়ের আল মোকাদ্দাসা মেট্রো লাইনে ওই বিশেষ ট্রেনটি চলাচল করবে সাত দিন। এটি মক্কার রেলব্যবস্থায় উচ্চ সক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্রেন। বছরে হজের সময় মাত্র সাত দিন এই ট্রেনটি শাটল সার্ভিস দেয়। হজযাত্রীদের বিভিন্ন পবিত্র স্থাপনায় আনা-নেওয়া করে।
পরিবহন ও লজিস্টিক সার্ভিসের মুখপাত্র সালেহ আল জাওয়াইদ বলেছেন, বিমান, স্থল, সমুদ্র ও লজিস্টিকসসহ সফরের সব সেক্টরে বার্ষিক হজযাত্রার বিস্তৃত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় হারামাইন হাইস্পিড রেলওয়ের ট্রিপ সংখ্যা শতকরা ৭৫ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। উপরন্তু কমপক্ষে ২৫ হাজার বাস হজযাত্রীদের নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক সফরকে নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রেও ইন্সপেকশন প্রক্রিয়া আছে। পরিবহনব্যবস্থাকে উন্নত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ ড্রোনসহ সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক যানবাহনে এআই ব্যবহার করে সড়ক স্ক্যান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৭ হাজার ১৫৭ জন সৌদি আরবে পৌঁছেছেন মোট ২২৪টি ফ্লাইটে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৮১ হাজার ৯০০ জন।
এদিকে চলতি বছর হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত ১৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে বার্ধক্যজনিত ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট পরিচালনা শেষ হয়েছে গত শনিবার। সূত্র: সৌদি গেজেট
খুলনা গেজেট/এইচ