সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ সড়কে জীবন দিয়ে চলেছে। কখনো ব্যক্তি, কখনো গোটা পরিবার চোখের নিমিষে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৪ জন মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। এই পটভূমিতে সড়কে মোটরযান চালাতে গেলে মোটরযান আইন সম্পর্কে সম্মক ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাতে সড়কে কমে আসবে দুর্ঘটনা, পাশাপাশি জেল জরিমানার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই মোটরযান আইন সম্পর্কে সচেতন নন। মামলা হলে কি করতে হবে সেটাও অনেক সময় বুঝতে পারেন না।
মোটরযান আইনে মামলা হলে করণীয় :
যেকোনো আইন ভাঙ্গার জন্য মামলা হতে পারে। ডকুমেন্টারি বা অন্য কোনো কারণে মোটরযান আইনে মামলা হলে সেটা বিশেষ উদ্বেগজনক কিছু নয়। যেভাবে মামলা নিষ্পত্তি করবেন –
১. পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা নির্ধারিত তারিখে ঐ এলাকার ট্রাফিক অফিসে যাবেন।
২. উক্ত জেলা এসপি/ডিসি মামলার জরিমানা ঠিক করে দিবেন। জরিমানা নির্ধারণে এসপি/ডিসি উক্ত ধারার সর্বোচ্চ জরিমানার চার ভাগের একভাগ পর্যন্ত কমাতে পারেন অথবা মুক্তিও দিতে পারেন।
৩. উক্ত জরিমানা নির্ধারিত চালান ফর্মে সোনালি ব্যাংক/বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা ট্রাফিক অফিসে জমা দিতে হবে।
৪. ব্যাংকে জমা দিলে চালান ফর্মে দুই কপি ট্রাফিক অফিসে জমা দিতে হবে ।
৫. মামলা যদি মেশিনে হয় তাহলে কিউ ক্যাশ এর মাধ্যমে জরিমানা জমা দিবেন। সেক্ষেত্রে মামলা স্লিপে টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকবে।
৬. চালান ফর্মে/কিউ ক্যাশে জরিমানা জমা দেয়ার পর ট্রাফিক অফিস থেকে আপনার জব্দ করা গাড়ির কাগজ বুঝে নিবেন।
যদি উপরের কাজগুলি না করেন :
১. ট্রাফিক অফিস আপনার মামলা ও জব্দকৃত কাগজ আদালতে পাঠাবে ।
২. আদালত আপনার জন্য সমন জারি করবে। (সমন হল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ পত্র)
৩. আদালত তিন বার সমন জারি করবে । তারপরও যদি হাজির না হন।
৪. আদালত আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করবে। (ওয়ারেন্ট হল গ্রেফতারি পরোয়ানা )।
৫. তখন আপনি উক্ত মামলা উকিল ধরে বা নিজে নিষ্পত্তি করেন। সেক্ষেত্রে জরিমানা বা জেল অথবা উভয় দন্ড হতে পারে।
মোটরসাইকেলে মামলা হওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইলে মোটরযান আইন ২০১৮ অনুযায়ী করণীয় :
১. তিনটা পেপারের যে কোন একটি না থাকলে অবশ্যই মামলা হবে :
(ক) রেজিষ্ট্রেশন পেপার (খ) ট্যাক্স টোকেন (গ) ড্রাইভিং লাইসেন্স
২. ট্যাক্স টোকেন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ থাকতে হবে। না হয় মামলা হবে। রেজিষ্ট্রেশন পেপার এর মেয়াদ লাগে না।
৩. সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনছেন কিন্তু নাম ট্রান্সফার বা পরিবর্তন করেননি, মামলা হবে।
৪. লার্নার পেপার আছে কিন্তু পরীক্ষা, ছবি তোলা এবং ফিংগার দেননি এখনো, মামলা হবে।
৫. বাইক ড্রাইভ করার সময় হেলমেট পরেননি অথবা আপনি পরেছেন কিন্তু আপনার পিছে যে আছে সে পরেনি, মামলা হবে।
৬. ট্রাফিক/রোড সিগনাল না মানলে মামলা হবে।
৭. উল্টো পথে আসলে মামলা হবে।
৮. ব্রেক লাইট না জ্বললে, ইন্ডিকেটর লাইট ভাংগা বা না থাকলে, রাতে হেড লাইট না জ্বালালে মামলা হবে।
৯. ড্রাইভ করার সময় মোবাইলে কথা বললে অথবা নেশা করে ড্রাইভ করলে মামলা হবে।
১০. অনুমতি ব্যতিত বাইক মোডিফাই করলে, রঙ পরিবর্তন করলে, ঠওচ হর্ন ব্যবহার, ফগ লাইট ব্যবহার, হ্যালোজেন লাইটের জায়গায় খঊউ হেডলাইট ব্যবহার করলে মামলা হবে।
১১. বাইকে ২জন এর অধিক যাত্রি থাকলে মামলা হবে।
১২. অবৈধ ভাবে পার্কিং করলে মামলা হবে।
১১. সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি/পুলিশ এর কাজে বাধা সৃষ্টি করলে মামলা হবে।
১২. ফুটপথে মোটরসাইকেল চালালে মামলা হবে।
কে আপনাকে মামলা দিতে পারবে :
১. আপনাকে যে মামলা দিবে তাকে সার্জেন্ট/সাব ইন্সপেক্টর বা তার থেকে উপরে হতে হবে।
২. পুলিশ কর্মকর্তাকে পোশাক বা উর্দি পরা থাকতে হবে।
৩. মামলা দিলে ধারা ও করণ উল্লেখ করে লিখে দিবে।
৪. মামলাকারীর পরিচয় ঐ মামলাতে থাকবে।
উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়া ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি চালক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি সচেতন মহলকেও সচেতনতা তৈরির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সচেতনতা সৃষ্টিতে।
খুলনা গেজেট/এনএম