খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

সড়ক দুর্ঘটনা ও আমাদের করণীয়

সৈয়দা আরিফা আশরাফি চুমকি

দেশ যখন এগিয়ে চলেছে, তখন কিছু কিছু সামাজিক সমস্যা এগিয়ে যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করছে। আমাদের সমাজে এখনো বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদক সেবন, নারী নির্যাতন, মানব পাচার, মানবাধিকার না থাকার মত সমস্যাগুলো রয়ে গেছে। তারপরও যেটি এখন সামাজিক সমস্যা থেকে সামাজিক ব্যাধিতে রুপান্তরিত হয়েছে সেটা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। বর্তমান আমরা মিডিয়ায় চোখ রাখলেই প্রতিনিয়ত যে খবরটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। যা গত দু’বছর ভয়াবহ করোনার চেয়ে অধিকতর ভয়ংকর।

প্রতিদিন দেশের কোন না কোন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আর তাতে অকালেই প্রাণ হারাচ্ছে কত জন তার ইয়ত্তা নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর হাজারো মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছেন। যার ক্ষয় ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবার কে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

কয়েকটি তথ্য দিলে আমরা সহজে বুঝতে পারবো গত একদশকে সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সমাজ কে কিভাবে আঁকড়িয়ে ধরেছে।

গত এক দশকে ২৯ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২০১৪ সালে ৮৫৮২ জন। আর সবচেয়ে কম ২০১৬ সালে ৪০৪৪ জন।

বর্তমান বছরের আগের দুই বছর রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ৪৭৩৫টি। এই সময় নিহত হয় ৫৪৩১ জন। আর আহত হয়েছেন ৭৩৭৯ জন।

অনুরূপ ভাবে ২০২১ সালে দুর্ঘটনা হয়েছে ৬২১৩ টি। নিহত ৮৫১৬ জন।আহত ৯৭৫১জন। এর মধ্যে রেল দূর্ঘটনা ঘটেছে ৪০২ টি নিহত ৩৯৬ এবং নৌ দূর্ঘটনা ঘটেছে ১৮২ টি এবং ৩১১ জন নিহত হয়েছেন।

চলতি বছর মে মাসে ৫২৮ টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৪১ জন এবং আহত ১৩৬৪। মে মাসে গড়ে প্রতিদিন ২১ জন নিহত হয়েছেন। যা পূর্ববতী মাস এপ্রিল থেকে শতকরা ১৪.১৯ শতাংশ বেশি। আবার দুর্ঘটনার মধ্যে মটর সাইকেল দুর্ঘটনা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে ৪৬.৭৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটর সাইকেলে। এতে নিহত হয়েছেন ২৭৯ জন।

সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান। এগুলো প্রতিরোধ করতে না পারলে দুর্ঘটনা চলতে থাকবে। দুর্ঘটনার কারণের মধ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব, অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, যান্ত্রিক ত্রুটি সম্পন্ন গাড়ি ব্যবহার, ফিটনেস না থাকা গাড়ি ব্যবহার, ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি যাত্রী নেওয়া,ভাংগা ও অপ্রশস্ত সড়ক, লাইসেন্সবিহীন চালক, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, মোবাইল ফোনে কথা বলতে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে না জানা এবং না মানা, ওভার টেকিং করা, শাস্তি ভোগ না করা, রাস্তা মধ্যে হাট বাজার বসা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, সর্বোপরি বিআরটিএ যথাযথ ভূমিকা না রাখার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েই চলেছে। তদুপরি উঠতি বয়সের ছেলেদের মটর সাইকেল যেনতেনভাবে চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

এখনই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবার জন্য অনেক গুলো বিষয় নজর দেওয়া জরুরি। তার মধ্যে রয়েছে নিরাপদ সড়ক, জনগনকে সচেতন করা ও ফুটপাত ব্যবহার করা, সতর্কতার সাথে গাড়ি চালানো, চালকদের যথাযত প্রশিক্ষণ, সড়ক প্রশস্ত করণ, ওভার টেকিং না করা, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল না নেওয়া, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি না চালানো, চালকদের ঘুমের ও অবসরের সময় করে দেওয়া, দূরপাল্লার বাসে দুই জন চালক রাখা, মাত্রা‌তিরিক্ত গতিতে গাড়ি না চালানো, ফিটনেস নেই এমন গাড়ি সড়কে না নামানো যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করা, মোটর সাইকেল ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা এবং অপরাধের শাস্তি যথাযথভাবে দেওয়া। সর্বোপরি বিআরটিএর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।

সবশেষে বলি সড়ক মহাসড়ক গুলো হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার আতুর ঘর। আর যানবাহন গুলো ঘাতক দৈত্য। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে সুস্থ দেহে ঘরে ফিরে আসা নিশে চিন্তায় থাকে প্রতিটি পরিবার। তাই আসুন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে একসাথে কাজ করি। আমরা সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি।

(লেখক : গণমাধ্যম কর্মী)

খুলনা গেজেট / এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!