সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় সাতজন, বগুড়ায় চারজন, সিরাজগঞ্জে চারজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, গাজীপুরে দুইজন, নীলফামারীতে একজন, ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিনজন, চট্টগ্রামে একজন, দিনাজপুরে একজন, ঝিনাইদহে এক কৃষক এবং হবিগঞ্জে দুইজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ৩১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পটুয়াখালীতে এক দুর্ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বারোবাজারে ইন্জিনচালিত তিন চাকার আলমসাধু ও ট্রাকের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ২জন আহত হয়েছে। নিহত লুকমান (৭০) কালীগঞ্জ উপজেলার ১১নং রাখালগাছি ইউনিয়নের খোশালপুর গ্রামে। আহত হয়েছেন একই গ্রামের বাবু মিয়া (২৬) ও রিমন হোসেন (১২)।
নিহতের পরিবার বলছে, নিহত ও আহত ৩ জন কৃষক তাদের জমিতে উৎপাদিত সবজি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আলমসাধু যোগে পাশ্ববর্তী বারিনগর ( সাতমাইল) বাজারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের পিরোজপুর পেট্রোল পাম্পের সন্নিকটে পৌঁছাতে পিছন দিক থেকে একটি ঘাতক ট্রাক সজোরে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এলাকার সাধারণ মানুষ আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে বারোবাজার গরীব শাহ ক্লিনিকে নিলে লুকমানকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা দেন। আহত ২ জনের মধ্যে ২৬ বছরের যুবক বাবু বারোবাজারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১২ বছর বয়সের রিমনের অবস্থা গুরুতর হবার কারণে তাঁকে যশোর শহরের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মির্জাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে বাসের ধাক্কায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও ৯ জন আহত হয়েছেন। শনিবার ভোররাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার দুল্যা মনসুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তাদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকাগামী দাঁড়িয়ে থাকা একটি বালুভর্তি ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর মির্জাপুর থানা পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে পৌনে ৭টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা টুটুল বলেন, তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
অপরদিকে, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বাসচাপায় মা ও দুই শিশু সন্তানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- মির্জাপুর উপজেলার বাশতৈল এলাকার মাসুদের স্ত্রী পারভিন আক্তার (২৮) ও তার ছেলে সুমন (৮) ও মেয়ে সাদিয়া (৬)। এ ঘটনার পরপরই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, হেঁটে সড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতালে আনার পর দুইজনের মৃত্যু হয়।
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় প্রাইভেটকার ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও একজন আহত হয়েছেন। হতাহত সবাই প্রাইভেটকারের যাত্রী। নিহতরা হলেন- নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জহতনগর গ্রামের তানসের আলী ও তার ছেলে টগর, মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান ও প্রাইভেটকার চালক সুমন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক সড়কের কালেরপুকুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
কাহালু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমবার হোসেন জানান, সকালে নওগাঁ থেকে একটি যাত্রীবাহী প্রাইভেটকার বগুড়ার দিকে যাচ্ছিল। পথে নওগাঁগামী দ্রুতগতির একটি পিকআপের সঙ্গে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারের তিন যাত্রী নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও দুজন। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আরও একজন মারা যান।
সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুপুর পৌনে ২টার দিকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কের খালকুলা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, আরপি পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটি ভুল লেনে গিয়ে দাঁড়ানো একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এ সময় সেই বাসটি দাঁড়ানো ট্রাকসহ গিয়ে আরেকটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উজানিসার এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও অটোরিকশাচালক চাঁন মিয়া (৫০) এবং অটোরিকশার যাত্রী কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন (৪৫)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, সকালে কুমিল্লা অভিমুখী একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অটোরিকশার আরও চার যাত্রী।
গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। ভোরে মহানগরের পুবাইলের বসুগাঁওয়ে ট্রাক-লেগুনা, একই এলাকায় সুকুন্দী ব্রিজ এলাকায় অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে।
পুবাইল থানা পুলিশের এসআই আবুল কাশেম জানান, পুবাইলের বসুগাঁও-এ ভোর চারটার দিকে টঙ্গীগামী ট্রাকের সঙ্গে উল্টোপথে আসা নরসিংদীগামী লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার ১২ জন যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (৩৮) নামে একযাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সকাল সাড়ে আটটায় পুবাইলের সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় অটোরিকশার মুখোমুুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। ইব্রাহিম নরসিংদী মনোহরদী থানার ইদ্রিস আলীর ছেলে।
পুবাইল থানা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় অটোরিকশা দিয়ে জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। এ সময় তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি সুকুন্দীবাগ ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত অটোচালকদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
নীলফামারী জলঢাকার টেংগনমারী-মীরগঞ্জ সড়কের কিসামত বটতলা শান্তিনগর বাজারে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ভ্যানচালকের নাম আজিজুল হক (৪৫)। তিনি জলঢাকা উপজেলার আরাজি কাঠালি বালাপাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জলঢাকা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক নুরুল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করেছি। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান আছে।
পটুয়াখালীর পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের মৌকরণ এলাকায় যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে অন্তত ২০ আহত হয়েছেন। তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শনিবার ভোরের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুমকি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুস সালাম জানান, ঈগল পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটা যাচ্ছিল। পথি মধ্যে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের মৌকরণ ব্রিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা যাত্রীরা আহত হয়েছেন।
খুলনা গেজেট / আ হ আ