পৃথিবীকে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য বানিয়েছেন পরীক্ষার স্থান। আর আখেরাতকে বানিয়েছেন প্রতিদানের স্থান। কে সৎকর্ম করে আর কে মন্দ কর্ম করে পৃথিবীতে এই পরীক্ষা হয়। বুদ্ধিমান ব্যক্তি সর্বদা আখেরাতের কথা স্মরণ করে নেক কাজে মগ্ন থাকেন।
আল্লাহ তাআলা বান্দার সৎকর্মের মূল প্রতিদান আখেরাতে দেবেন; তবে কিছু প্রতিদান এই পৃথিবীতেও দিয়ে থাকেন। বক্ষ্যমাণ লেখায় সৎকর্মের কিছু পার্থিব লাভের প্রতি আলোকপাত করা হলো।
রিযিক বৃদ্ধি পাওয়া
সৎকর্মের কারণে রিযিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : ‘যদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা ওপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।’ (সুরা মায়েদা : ৬৬) এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের দ্বারা রিযিক বৃদ্ধি পায়।
কল্যাণধারা বর্ষণ
সৎকর্মের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি কল্যাণধারা বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব কল্যাণধারা উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদের পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সুরা আরাফ : ৯৬)
পেরেশানি থেকে মুক্তি লাভ
সৎকর্ম করার দ্বারা সকল প্রকার পেরেশানি থেকে মুক্তি মেলে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ২,৩) এই আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, তাকওয়া অবলম্বনের বরকতে সকল প্রকারের পেরেশানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সহজে লক্ষ্য অর্জন
সৎকর্ম করার দ্বারা সহজে উদ্দেশ্য সাধন হয়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা তালাক : ৪)
পবিত্র জীবন
সৎকর্মের কারণে উত্তম জীবন লাভ হয়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।’ (সুরা নাহল : ৯৭) সৎকর্মশীল লোকেরা এমন নির্মল জীবন যাপন করেন, যা রাজা-বাদশারা কল্পনাও করতে পারেন না।
প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ এবং ধনসম্পদ
সৎকর্মের কারণে পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং ধনদৌলত ও সন্তান-সন্ততি বাড়ে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন : ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২)
বিপদাপদ থেকে হেফাজত
ঈমান আনয়নের কারণে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে বিভিন্ন ধরণের বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন। কুরআনে কারিমে এরশাদ হচ্ছে : ‘আল্লাহ মুমিনদের থেকে হটিয়ে দেন।’ (সুরা হজ : ৩৮) অর্থাৎ সকল বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত দূর করেন। অপর জায়গায় এরশাদ হচ্ছে : ‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক।’ (সুরা বাকারা : ২৫৭)
উন্নত মর্যাদা প্রাপ্তি
আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের সমুন্নত মর্যাদা দান করেন। কুরআনে কারিমে এরশাদ হচ্ছে : ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।’ (সুরা মুজাদালা : ১১) নেক কাজের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তরে গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন : ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাদের জন্যে সৃষ্টি করবেন ভালবাসা।’ (সুরা মারইয়াম : ৯৬)
অন্তরে প্রশান্তি লাভ
মুমিন বান্দা যিকির দ্বারা আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রা’দ : ২৮)
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া মাদানিয়া, সেনবাগ, নোয়াখালী।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস