খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
  সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ৪ জন নিহত

স্মৃ‌তি বিজ‌ড়িত সেই প্লা‌টিনাম ক‌লোনী এখন বিরানভূ‌মি !

মোহাম্মদ মিলন

এখানেই জন্ম। শৈশব, কৈশর কেটেছে। কতো হাসি আর কান্না, হৈ-হুল্লোড় করেছি। এখানেই খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। ঘনবসতির কারণে চিকন গলি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে হতো। কিন্তু আজ সেটি শুনশান মাঠ। ঘর-বাড়ির শুড়কি আর কয়েকটি গাছ বাদে কিছুই নেই। এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। শৈশব, কৈশরের স্মৃতি বিজড়িত বাসতভিটা দেখিয়ে এমনটাই বলছিলেন মোঃ মাসুদ ওরফে বাবু। তিনি প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আদম আলীর ছেলে। গত বছরই তিনি মিলের কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসর নিলেও মিলের কলোনীর উত্তরপাশ্বে ঘরতুলে বসবাস করে আসছিলেন তিনি ও তার পরিবার। কিন্তু মিলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করায় চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর কলোনী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাদের। এখন খালিশপুর পৌরসভার মোড়ে ভাড়া বাড়িতে বসবাস তাদের।

মাসুদ বলেন, ওই যে ওইখানটায় আমাদের ঘর ছিল, আর এই মাঠে খেলাধুলা করেছি। কতোই না স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এখন খুব কষ্ট লাগে। সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। মিলের প্রয়োজনীয় একটি কাজে এসেছিলাম, তাই মন চাইলো নিজ কলোনীটা একটু ঘুরে দেখি, এ জন্যই এখানে আসা।

খালিশপুর প্লাটিনাম জুট মিলের কলোনীর প্রধান গেট থেকে প্রবেশের পর দক্ষিণে ছিল কাঁচা লাইন। সেখানে এখন দরজা-জানালা বিহীন কয়েকটি ঘর রয়েছে। তার পাশে গোটা কলোনীই বিধ্বস্ত। দেখলে মনে হবে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় না হয়, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে গোটা কলোনী। প্রকৃত পক্ষে মিলের যে সকল শ্রমিকরা এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করতো, তাদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ প্রদান করায় তারা এখান থেকে চলে গেছেন। সাথে নিয়ে গেছেন তাদের নিজ অর্থায়নে গড়ে তোলা ঘরবাড়ি তৈরির সরঞ্জাম বাঁশ, খুটি, টিন, ইট, জানালা, দরজা সবই। শুধু রেখে গেছেন জমি আর শুড়কিটুকু। তার পাশে কয়েকটি টিনের ঘর দেখা যায়। এই ঘরগুলো মিল কর্তৃপক্ষের। তবে সেখানে নেই কোন দরজা জানালা। সারিবদ্ধ বাথরুমগুলোরও একই অবস্থা। পাশেই প্লাটিনাম কলোনীর মাঠ। মাঠের পশ্চিম পাশ ঘেষে রাস্তা। রাস্তা দিয়ে উত্তরের দিকে যেতেই মিলের স্কুল ও পানির টেঙ্কি। রাস্তার মাথা যেয়ে মিলিত হয়েছে উত্তরের কলোনীর দিকে। এই কলোনীর দ্বিতলা দালানগুলো দাড়িয়ে রয়েছে স্ব মহিমায়। কিন্তু নেই কোন মানুষ। জনশূণ্য গোটা এলাকা। একটু উত্তর পশ্চিমে এগোতেই আরও একটি কাঁচা কলোনীর দেখা মেলে। সেটিও বিধ্বস্ত, একই অবস্থা। পূর্বপাশে আনসার ক্যাম্প আর মসজিদ। সেখানে কয়েকজনের দেখা মেলে। কথা হয় মিলের শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মিলের এই শ্রমিক বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় এই মিল কলোনীতে বসবাস। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই কলোনীকে ঘিরে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। এখন সব নতুনের মতো মনে হচ্ছে। জীবনে কখনো ভাবতেই পারিনি কলোনীর এই অবস্থা হবে।

মিল সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকদের থাকার জন্য মিল কলোনীতে ২টি চারতলা ভবন, ১১টি দ্বিতলা ভবন ও একটি একতলা ভবন আছে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য ৩৭৫টি কাঁচা বসতঘর গড়ে ওঠে। ছিল আরো ৫২টি আধা কাঁচা ঘর। এসব বসতঘরের শ্রমিকরা তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করতো। ঘনবসতিপূর্ণ এই কলোনীতে রয়েছে একটি স্কুল, একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ। তবে এখন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, আনসার ক্যাম্প আর কয়েকটি পরিত্যাক্ত দালান ব্যতীত আর কিছু নেই। কাঁচা ঘরবাড়িগুলো ভেঙে নিয়ে যাওয়ায় শূণ্য মাঠে পরিণত হয়েছে।

মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির খান বলেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের টাকা পরিশোধ করায় শ্রমিকরা মিল কলোনী ছেড়ে চলে গেছে। যাওয়ার সময় মিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তাদের নিজস্বভাবে গড়ে তোলা সরঞ্জাম নিয়ে গেছে। যে কারণে এখন এখানে ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। কিছু মালামাল মিল কর্তৃপক্ষ নিজ হেফাজতে রেখেছে। গোটা কলোনী এখন ফাঁকা।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

এ বিষয়ে মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, মিলের শ্রমিকরা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ পাওয়ার পর কলোনী ছেড়ে চলে গেছেন। যাবার সময় তারা নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলা কাঁচা বাসা ভেঙে নিয়ে যায়। আর মিলের নিজস্ব ভবনগুলোর দরজা, জানালা, পানির পাইপ লাইন খুলে এনে মিল গোডাউনে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এমনটা করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিশাল এই কলোনীর নিরাপত্তার দায়িত্বে মিলের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ জন পালাবদলে দায়িত্ব পালন করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

খুলনা গেজেট/ এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!