‘সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্মৃতিসৌধ চত্বরে অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজনের পদচারণা, গরু-ছাগল চরাণো এবং মাদকসেবীদের আড্ডায় সৌধের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হচ্ছে। উন্মুক্ত মঞ্চটি এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। মেঝে ফেটে গেছে। মঞ্চ দেয়ালটিও খসে পড়ছে। বছর ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর আসলে স্মৃতিসৌধের কথা সবার মনে পড়ে।’ কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ নগর এলাকার চল্লিশোর্ধ বাসিন্দা মো. জলিল গাজী।
খুলনার বদ্ধভূমি ‘গল্লামারী স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ’ প্রকল্পটি অপূর্ণতায় ১১টি বছর কেটে গেল। পূর্ণতা না পাওয়ায় বদ্ধভূমির পূর্ণাঙ্গ সৌন্দর্য ফিরে আসেনি। মূল স্তম্ভ নির্মিত হলেও বাকি কাজের কোনও অগ্রগতি নেই। অর্থ পেতে মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি খুলনা জেলা পরিষদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালিন সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল। ২০০৯ সালের ২৩ জুন আজাদ-ইলোরা জেভি নামের খুলনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৪ টাকা চুক্তিতে ওই মূল স্তম্ভ নির্মাণের কাজ পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর কার্যাদেশ পেয়ে মূল স্তম্ভ নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০১০ সালের অক্টোবরে। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক স্মৃতিসৌধটির উদ্বোধন করেন।
এদিকে স্মৃতিসৌধের পূর্ণতা দিতে ২০১১ সালের মার্চে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে বাকি ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে পত্র প্রেরণ করে জেলা পরিষদ। অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুলিপি প্রেরণ করে জেলা পরিষদ। এরপর ধারাবাহিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আর কোনও অগ্রগতি হয়নি।
খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খুলনা গেজেটকে বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্মৃতিসৌধে মাদকসেবীদের আড্ডা হয়। অবহেলিতভাবে পড়ে থাকার কারণে দৃষ্টিনন্দন ফিরে আসেনি। তিনি বলেন, নিরাপত্তা জোরদার ও সৌধের সৌন্দর্যপূর্ণ আগ্রাসন করতে প্রকল্প নেয়া হবে। গল্লামারী স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিজয় দিবস পালনের লক্ষে স্মৃতিসৌধ ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সৌধের মূল স্তম্ভে রঙ করছিলেন মো. মেহেদী ইসলাম নামের এক রঙমিস্ত্রী। তিনি জানান, কয়েকদিন পর ১৬ ডিসেম্বর, তাই পরিষ্কার করে রঙ লাগানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে তারা ১৫ জন মিলে কাজটি করছে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, ২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে আরও ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৪ টাকা যোগ করে মূল স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আরও ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অর্থ পেলে সৌধটির পূর্ণতা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহুল গল্লামারীতে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প ২০০৯ সালে গ্রহণ করা হয়। স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে মূল স্তম্ভ নির্মাণ, স্বাধীনতাসৌধ অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পার্কিং ইয়ার্ড, সীমানা প্রাচীরসহ ফটক ও গার্ড বা ওয়েটিং রুম ও রেস্টুরেন্ট এবং ম্যুরাল দিয়ে গেট নির্মাণ, বৃক্ষরোপন ও দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তৈরি, চত্বরে পানির ফোয়ারা স্থাপন, বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি। এরমধ্যে মূল স্তম্ভ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ১৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর মূল স্তম্ভ নির্মাণে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের পর স্তম্ভ নির্মাণে দুই দফা দরপত্র আহবান করে জেলা পরিষদ।
খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সরদার মাহাবুবার রহমান মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, গল্লামারী স্মৃতিসৌধে যাওয়ার সড়কটি এখনো কাঁচা রয়েছে, সামান্য বর্ষা হলে সেখানে আর যাওয়া যায় না। স্মৃতিসৌধ এলাকায় অবাধে গরু-ছাগল চরে বেড়ায়। এর সম্মান ও আবেদন রক্ষায় এটিকে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করা প্রয়োজন।
খুলনা গেজেট / এআর