বয়স ও সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে ১৯৮৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু লোকমুখে একজন খেলোয়াড়ের নাম শুনে ফুটবলের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়। আমাদের গ্রামের মাঠে কেউ ভালো ফুটবল খেলা করলে তাকে ঐ খেলোয়াড়ের সঙ্গে তুলনা করা হতো। তিনি আর কেউ নন বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা। একজন খেলোয়ার মানুষের হৃদয়ে কতটা জায়গা করে নিতে পারে ম্যারাডোনা তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আমি বরাবরই ইতালির সাপোর্টার। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ থেকে টিভিতে খেলা দেখা শুরু করি। ম্যারাডোনা সম্পর্কে ছোট্ট একটি স্মৃতিচারণ করতে চাই। আমার গ্রামের বাড়ি কপিলমুনিতে একটি ধানের চাতালে বসে রাতে আমরা প্রায় ১৫-২০ জন একটি সাদাকালো টিভিতে খেলা দেখতাম।
অধিকাংশরা ছিল আর্জেন্টিনা অর্থাৎ ম্যারাডোনার টিমের সাপোর্টার। আমিসহ দু’একজন ছিল যারা অন্য টিমের সাপোর্টার। সেইবার কোয়াটার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া। খেলা অমীমাংসিত থাকায় স্থানীয় সাপোর্টারদের মধ্যে বিষাদের ছায়া নেমে আসে।খেলা গড়ায় ট্রাই ব্রেকারে। সবথেকে বিপত্তি ঘটে দলের পক্ষে দ্বিতীয় কিক করতে গিয়ে দিয়াগো ম্যারাডোনা গোল করতে ব্যর্থ হলে, আমাদের পাশের অনেকেই হাউ হাউ করে কান্না শুরু করে ।তারমধ্যে কপিলমুনির নিমাই চন্দ্র দে খুবই ভেঙে পড়েন। আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বলি। আর্জেন্টিনা জিতবে। ঐ খেলায় ম্যারাডোনা গোল করতে ব্যর্থ হলেও, আর্জেন্টিনা জেতা শুধু কপিলমুনির সাপোর্টাররা নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আনন্দের ঢল নেমেছিল। একজন খেলোয়াড় কে মানুষ কতটা ভালোবাসতে পারে ম্যারাডোনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ম্যারাডোনাকে নিয়ে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে ফুটবল উৎসব হয়েছে তা সত্যিই বিরল। তার পায়ের জাদুতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত মানুষ থাকতো মাতোয়ারা।এমন একজন মানুষের মৃত্যুতে শুধু বিশ্ব ফুটবল নয়, গোটা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে শোকাহত ।তিনি না থাকলেও তার শৈল্পিক ফুটবলের জাদু কখনো ভুলতে পারবেনা ফুটবল বিশ্বকাপ।
লেখক : ক্রীড়া শিক্ষক, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, খুলনা
খুলনা গেজেট /এমএম