খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানিক সাহা

কাজী মোতাহার রহমান

সেনাপ্রধান জে. এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২২ মার্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ক্ষমতাচ্যুত হন। জাতীয় সংসদের সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। রাজনৈতিক তৎপরতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার হরণ করা হয়। নানাবিধি আরোপ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়। মানুষ এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে দিনাতিপাত করতে থাকে।

বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় এসে জে. এরশাদ স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও ছাত্র রাজনীতি ছিল না। ১৯৮৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসকে সামনে রেখে দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়। স্বৈরাচারের অবসান, রাজনীতি উন্মুক্ত, সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গড়ে ওঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এরশাদের পদত্যাগ ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। ফলশ্রুতিতে পুলিশের গুলিতে কাঞ্চন, দিপালী সাহাসহ তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়। আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে।

ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক মাস পর করনোশেন গার্লস স্কুলের বিপরীতে খুলনা জেলা ন্যাপের সাবেক সভাপতি মরহুম আব্দুল জব্বারের বাড়িতে স্থানীয় ছাত্রনেতৃবৃন্দের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি জহির উদ্দিন স্বপন, পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি দিদারুল আলম বাবুল, কামাল উদ্দিন আহমেদ (আজকের বিবিসি’র সংবাদকর্মী), শেখ আবু হাসান, গাজী ওয়াহেদুজ্জামান টিটো ও মানিক চন্দ্র সাহা উপস্থিত ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে আহবায়ক ছাড়াই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্রলীগ (জালাল-জাহাঙ্গীর), পারভেজ আলম খান, বাবুল রানা, মো. আব্দুল গফফার, মোর্তুজা রশিদী দারা, জাতীয় ছাত্রলীগের এসএম কামাল হোসেন, মো. আইয়ুব আলী শেখ, হুমায়ুন কবীর ববি, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন সুভাস ব্যানার্জী বাবু, মঈন উদ্দিন আহমেদ, ছাত্র ইউনিয়নের এ কে শামিম, মানিক চন্দ্র সাহা, মাহাবুবল আলম বুলবুল, এ কে এম বেদুঈন, ছাত্র মৈত্রীর গাজী ওয়াহেদুজ্জামান টিটো, মজিবর রহমান, এমদাদুল হক হাসিব, গোলাম মোস্তফা, ছাত্রলীগ (মুনির-হাসিব) আবু কাজী, স ম রেজাউল করিম, খালিদ হোসেন, ছাত্রলীগ (আক্তার-বাবলু) শেখ আবু হাসান, ছাত্র সমিতির আব্দুল ওহাব, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্রতর করার জন্য খুলনার ছাত্র সমাজ কোমর বেঁধে নামে। কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নানা কর্মসূচি পালন করে। বিএল কলেজ, কমার্স কলেজ, সুন্দরবন কলেজ, সিটি কলেজ ও দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে মানিক চন্দ্র সাহা নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে। ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে তৎপরতা চালায়। এর একপর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। ছাত্র জীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, পরবর্তীতে সিপিবি’র সাথে জড়িয়ে পড়েন। মার্কসবাদী দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে শ্রেণিহীন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। সর্বহারার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিজেকে প্রস্তুত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজতন্ত্রই মানুষের মুক্তির পথ।

প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলতে হয়, স্বৈরশাসনের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ হলেও ছাত্র মিছিলে দাঁড়িয়ে তিনি স্বোচ্চার ছিলেন। গ্রেফতার ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে ছাত্র সমাজের মধ্যে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে মানিক চন্দ্র সাহা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সে সময়কার খুলনার ছাত্র আন্দোলনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেছেন। তার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগের জন্য গভীর শ্রদ্ধা।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!