জাল নোটের ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিনি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবদুল মালেককে বিদেশি পিস্তলসহ (৬৩) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার কাজ কর্মকর্তার গাড়ি চালানো। কিন্তু গাড়ি চালানো তো দূরের কথা খোদ মহাপরিচালকের গাড়ি ব্যবহার করতেন নিজে। ওই গাড়ি চালাতেন অধিদপ্তরের আরেক চালক। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ওই গাড়িটি কব্জায় ছিল গাড়ি চালক মালেকের। রোববার অভিযান চালিয়ে কোটিপতি এ গাড়ি চালককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তিনি স্বাস্থ্যে সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের গাড়ি চালাতেন। প্রভাবশালী এই গাড়ি চালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম করে শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রাজধানীতে গড়েছেন বিলাসবহুল বেশ কয়েকটি বাড়ি। খামার গড়েছেন নিজের নামে। ব্যাংকে জমা করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই অবাক হয়েছেন তার সম্পদের তথ্য পেয়ে। তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ও একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্র জানায়, মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন আছে এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা গেছে। এভাবে শত কোটি টাকার মালিক বলে গেছেন তিনি।
র্যাব জানায়, ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।
তিনি পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি। তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত রয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন। এই পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভারদের ওপর একছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ড্রাইভার মালেক তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অফিস সহকারী পদে, ভাই আব্দুল খালেককে অফিস সহায়ক পদে, ভাতিজা আব্দুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুবকে ড্রাইভার পদে, নিকট আত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চাকরি দিয়েছেন।
খুলনা গেজেট /এমএম