খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার বড় বাজারের পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস
  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা, নতুন করে বাড়ছে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু

তরিকুল ইসলাম

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই মাস ধরে কমলেও পুনরায় ক্রমাগত বাড়ছে। এদিকে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে চরম অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। ফলে নতুন করে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে।

সর্বশেষ ৫৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৪৫ জনের। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে একই সময়ে মারা গেছেন আরও ১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৯৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন এটি ছিল ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গেল বছরে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গত বছরের মার্চের পরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অঙ্কের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ধারণা করা হয়েছিল শীতকালে ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। নভেম্বরে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরে উঠলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত পড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে, দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিনশ’ জনেরও কম। তবে মার্চে গরমের মধ্যে নতুনকরে সংক্রমন বাড়ছে।

গত বছরে মার্চে দেশে শনাক্ত হওয়ার পর গত এক বছরে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে করোনা ও এর পারিপার্শ্বিক থাবায়। এক বছরে সরকারি হিসেবে দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৭৫ জন। মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৭৬ জন। সেরে উঠেছেন ৫ লাখ ৪ হাজার ১২০ জন। করোনা শনাক্তের পরপরই সরকারি নানা ব্যবস্থা সামনে আসে। সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, প্রতিষেধক টিকাও ইতিমধ্যে দেয়া হচ্ছে। কাজে ফিরেছে দেশের বেশির ভাগ মানুষই। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। টিকা নিতে প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে আতংক কাজ করলেও বর্তমানে সেটা কমেছে। এ পর্যন্ত দেশের প্রায় ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ খুলনা গেজেটকে বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে খুলনাকে দেশের মধ্যে মডেল বলা হয়েছে। টিকা দেওয়ার সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মোবাইল কোর্টসহ প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। তবে টিকা নেওয়ার পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অচিরেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ টিকার সুবিধা পেতে আরও অন্তত এক বছর লাগবে। তাছাড়া ঈদের ছুটির সময় আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম শুরু হবে। পাশাপাশি ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত বাড়বে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, টিকা নিই আর না নিই, স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, এটা উদ্বেগজনক। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেন, টিকা নেওয়ার পর বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যাচ্ছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন; কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এতে আবার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দেশের মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!