খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু
  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

মেহেদী হাসান বাপ্পী

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কি ভাবছে আমাদের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, যারা কিনা আগামী বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষার্থীর ভাবনা নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।

তাসনীন আশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
লাল সবুজ পতাকার জন্য বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিলো পঞ্চাশ বছর আগে। বাংলার মাটিতে প্রতিদিন যে লাল সূর্য উদিত হয় তার সাথে মিশে আছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত, দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা। বিশ্বে অন্য কোনো জাতির স্বাধীনতা অর্জনে এতো ত্যাগের নজির ইতিহাসে বিরল এবং অনন্য।

আমরা স্বাধীনতার অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এই দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, প্রযুক্তিসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে আমাদের উন্নতি হয়েছে। তবে আবার দেখতে পাই সমাজে নানা অসঙ্গতি ও অসমতার বেড়াজাল আমাদের ঘিরে ধরে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, আমরা সবাই যেনো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারি। আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ সেদিনই পরিপূর্ণ হবে যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হবে সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি। এই সময়ে প্রত্যাশা রইলো প্রতি প্রাণে জেগে উঠুক দেশাত্মবোধ।

রুবেল খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রবৃদ্ধির দেশ। অর্থনীতিতে অনেকটাই উজ্জ্বল এখন আমরা। দারিদ্রতা দূরিকরণ, সামাজিক বৈষম্য রোধ, নারীর ক্ষমতায়নে আমরা বিশেষ সাফল্য পেয়েছি। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অন্যতম বড় পাওয়া আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এছাড়া দ্রুত এগিয়ে চলছে মেট্রো রেলের কাজ। স্বাধীনতার পর দেশের অনেকটাই ছিলো কৃষি নির্ভর, তবে বর্তমানে লক্ষ করলে দেখা যায় দেশ শিল্প নির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি খাতের জিডিপিতে অবদান ছিলো ১৩.৩৫ শতাংশ। জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিলো সবচেয়ে বেশি ৫১.৩০ শতাংশ। আর শিল্প খাতে অবদান ছিলো ৩৫.৩৬ শতাংশ।

তবে এদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। প্রতিটি সেক্টরেই আমরা দুর্নীতির খবর পাই টেলিভিশন আর সংবাদপত্রের মাধ্যমে। এই দুর্নীতির কালো ছায়াকে প্রতিহত করতে না পারলে মুক্তিযোদ্ধারা যে চেতনায় এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন তা ধুলিসাৎ হবে। প্রত্যাশা এই দুর্নীতির মায়াজাল থেকে আমরা অতি শীঘ্রই মুক্তি পাবো, দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে দেশ।

উম্মে হানি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু ৫০ বছর আগে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, যে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ বাঙালি তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলো, ২ লাখ মা-বোন হারিয়েছিলো সম্ভ্রম সেই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য এবং প্রত্যাশা কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি?

দু:খজনক হলেও সত্য এই স্বাধীন দেশে এখনো ঘটেছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন আর যৌন হয়রানির মতো ঘটনা। এখনো রাস্তাঘাটে, গণপরিবহণে নারীরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে না। স্বাচ্ছন্দে চলাফেরার অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে কুরুচিপূর্ণ কিছু মানুষের লোলুপদৃষ্টি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রত্যাশা নারীর জন্য সমাজ হবে নিরাপদ। পাশাপাশি বন্ধ হোক নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো।

জিসান হাসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতা মানে শুধু শত্রুর কবল থেকে দেশকে বাঁচানো নয়। কিংবা মুখে মুখে স্বাধীনতার বুলি আওড়ানো না। বরং স্বাধীনতা হল আপন আলোর স্বকীয়তা ধরে রাখা, তার দ্যুতি ছড়ানো। এখানে যেমন বাক-স্বাধীনতা জরুরী, তেমনি জরুরী সকল কাজে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। স্বাধীনতা শব্দটির সাথে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে, এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য পৃথিবীর সকলেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে। দীর্ঘদিনের অধীনতা, দীর্ঘ অন্ধকার থেকে ৭১ সালের ২৬ মার্চ এই জনপদে জ্বলে উঠেছিল স্বাধীনতার প্রদীপ।

স্বাধীনতার পর ৭ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে ছোট ভূখন্ডের এই দেশ টি অনেক চড়াই উতরাই পার করে বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। অনেক দেশের জন্যই বাংলাদেশ হয়েছে রোল মডেল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় সহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে অগ্রগতি এখন চোখে পড়ার মতো।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে বঙ্গবন্ধু সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ বলেছিলেন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে যে সাফল্য তার পিছনে বঙ্গবন্ধুর এসব পদক্ষেপের বড় ভূমিকা রয়েছে। সমাজে নারীদের পড়ালেখা অল্প বয়সেই যেনো থেমে না যায় এজন্য সরকার দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত উপবৃত্তির ব্যবস্থা করছে। ২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্য বই দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৪.৭ %।

তবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে অনেক সমালোচনা। বছর বছর লক্ষাধিক গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে, তবে চাকরি না পেয়ে বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। কিছু দিন পর পরই শোনা যায় প্রশ্ন ফাঁসের গুঞ্জন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে কোনো যুবকই থাকবেনা বেকার। সকলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। দেশের উন্নয়নে তরুণ সমাজ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!