খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

বাগেরহাটে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

মাসুদুল হক, বাগেরহাট

বাগেরহাটে করোনায় আক্রান্তের হার প্রতিদিন বেড়েই চলছে। সংক্রমণ রোধে হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি সিদ্বান্ত বাস্তবায়নে করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার, স্বেচ্ছাসেবক, পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে সামনে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগামী ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণায় সংক্রমণ ভীতিতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। করোনার ভয়াবহতার মধ্যে এখনই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি বলেও মনে করছেন সচেতন মহল।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণের খবরে প্রচার প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রার্থীরা। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী বাগেরহাটের ৭৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে আগামী ২১ জুন ৭০ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, বাগেরহাটে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭’শ ৫২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে মোংলায় ৭০ শতাংশ এবং জেলায় সংক্রমনের হার ৪৫ শতাংশ।

বাগেরহাটের মোংলায় করোনা সংক্রমণের হার এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। জেলায় আক্রান্তের হার ৪৫ শতাংশ হলেও এই উপজেলার আক্রান্তের হার ৭০ শতাংশ। গত ৩০ মে মোংলা পৌরসভায় কঠোর বিধিনিষেধ দিলেও শনিবার (৫ জুন) থেকে পুরো উপজেলা জুড়ে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। চলমান বিধিনিষেধ রোববার (৬ জুন) শেষ হয় কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দ্বিতীয় বারের মত আরও সাত দিনের কঠোর বিধি নিষেধ জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে আতংকিত মোংলা উপজেলার মিঠাখালির বাসিন্দা মোল্লা রুহুল আমিন বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একদিকে কঠোর বিধি নিষেধ আবার একই সময়ে নির্বাচন। এতো মরণ ডেকে আনা। এই নির্বাচন বন্ধ করা উচিত।

কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের জেলার করোনা পরিস্থিতি ভালো না। সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে এতে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে আল্লাহই ভালো জানেন কি হবে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), বাগেরহাটের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব বলেন, করোনা সংক্রমনের হার যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা উচিত। বাগেরহাটে সংক্রমণ ও মৃত্যু হারের সাথে নির্বাচনটা খুবই বেমানান। নির্বাচন আসলে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটের স্বার্থে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবে। তারা নির্বাচনী কার্যক্রম চালাবে এটাই স্বাভাবিক। সে পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। বাগেরহাটের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই এলাকার নির্বাচনের বিষয়ে পুনঃবিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘মোংলায় করোনা সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন হলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা এই পরিস্থিতি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, বিগত দুই সপ্তাহ জুড়ে ক্রমান্বয়ে বাগেরহাটে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে মোংলা ও মোড়েলগঞ্জে। সদরেও সংক্রমনের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলায় ৭০ শতাংশ এবং জেলায় সংক্রমণের হার ৪৫ শতাংশ। তবে এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সংক্রমণের হার তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

বাগেরেহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এই শঙ্কার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্ত পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!