স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আমাকে অত্যন্ত বেদনাপ্লুত করেছে। তিনি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ডিজাইন ও নির্মাণ দিয়ে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্টতা আরো উচ্চ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তিনি গ্রামীণ পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সেভাবেই কাটিয়েছেন।
আমাদের সকল কর্মসূচি আয়োজনে তিনি সবার আগে দৌঁড়ে আসতেন। দেশে এবং বিদেশে প্রতি বছর আমাদের দুটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর যেকোন জায়গায় হোক না কেন মোবাশ্বের সেখানে উপস্থিত থাকবেনই। শুধু নিজে উপস্থিত থেকেই তৃপ্তি পেতেন না, দেশি বিদেশি বন্ধুদেরও তিনি নিয়ে আসতেন। একবার নিয়ে আসলেন আন্তর্জাতিক স্থপতি সমিতির সভাপতিকে। সেসূত্রে সভাপতির সঙ্গে আমার সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো। তিনি আমাকে আন্তর্জাতিক স্থপতি সমিতির বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে নিয়ে গেলেন। তখন মোবাশ্বের এই আন্তর্জাতিক সমিতির পরিচালনা পরিষদের সদস্য। আমি তাঁদের সম্মেলনে বক্তৃতা করবো এই আনন্দে মোবাশ্বের আত্মহারা। সেবার তিনি বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশীকে তাঁদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিয়ে গেলেন।
মোবাশ্বের ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান স্থপতি একথা সবার জানা। কিন্তু স্থপতি হিসাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর সম্মান ও অবস্থান দেখে আমি অবাক হয়েছি। তাঁর এই অবস্থান দেশে প্রায় অজানা রয়ে গেছে।
আমরা যত ভবন নির্মাণ করেছি তাঁর পরামর্শ সঙ্গে নিয়ে করেছি। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী আজীবন আমাদের সকল নির্মাণ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের কৌশলগত নির্মাণ উপদেষ্টা কমিটির সব সময় সভাপতি ছিলেন। আর মোবাশ্বের ছিলেন এই কমিটির একজন অপরিহার্য সরব সদস্য । আমরা এমন একজন ব্যক্তিকে হারিয়েছি যিনি দেশের মঙ্গলের জন্য যেকোন কাজের বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দিতে কখনও দ্বিধা করেননি, সেপরামর্শ অন্যের কাছে যত অগ্রহণযোগ্যই হোক না কেন। তাঁর মত স্ষ্টভাষী আরেকজন মানুষ পাওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন হবে।
আমি মহান আল্লাহ তাআলা এর কাছে তাঁর রূহ এর মাগফেরাত কামনা করছি, তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন এবং তার পরিবারকে এই ক্ষতি সহ্য করার ধৈর্য দান করুন। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট /বিএমএস