সাতক্ষীরায় স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে স্কুল ছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় দুই নারীসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম করেছে বখাটেরা। বুধবার (১৪ জুন) রাত ৮টার দিকে আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই নারীসহ তিনজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের অরবিন্দ ঢালীর ছেলে কৃষ্ণপদ ওরফে খোকন ঢালী, তার মেয়ে বড়দল আফতাবউদ্দিন কলিজিয়েট স্কুল এ- কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী চন্দ্রিমা ঢালী ওরফে ঋতু ঢালী, একই গ্রামের নকুল গোলদারের স্ত্রী ফুলমতি গোলদার ও কৃষ্ণপদ ঢালীর ছেলে স্বপন ঢালী। এদের মধ্যে প্রথমাক্ত তিনজনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে হামলার এই ঘটনায় যাতে মামলা করা না হয় সে জন্য খাজরা ইউপি’র এক সদস্য বুধবার রাতে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এসে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চন্দ্রিমা ওরফে ঋতু ঢালী জানান, স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে একই গ্রামের রশিদ মোড়লের বখাটে ছেলে মোহাম্মদ মোড়ল তাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছে। তার সহযোগী হলো রাউতাড়া গ্রামের সলেমানের ছেলে রানাসহ কয়েকজন। ৭ জুন সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর মোহাম্মদ আলী তার কয়েকজন বন্ধু তাকে উদ্দেশ্য করে নানা কটুক্তি করতে থাকে। এসময় কোন রকমে তিনি স্কুলে চলে যান। বাড়ি ফিরে বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যদের অবহিত করেন। মোহাম্মদ মোড়লকে তাৎক্ষণিক রাস্তায় পেয়ে প্রতিবাদ করেন তার ভাই স্বপন ঢালী।
এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর বিলে অবস্থানের সময় ভাই স্বপন ঢালীকে এলোপাতাড়ি কিল ও ঘুষি মেরে আহত করে মোহাম্মদ মোড়ল ও তার সহযোগী রাউতাড়া গ্রামের সলেমানের ছেলে রানা। স্বপনের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে রানাকে আটক করে গ্রাম পুলিশ সনাতন মন্ডলের জিম্মায় দেয়। এসময় পালিয়ে যায় মোহাম্মদ মোড়ল। খবর পেয়ে তিনিসহ বাবা কৃষ্ণপদ ঢালী, ফুলমতি গোলদারসহ কয়েকজন ওই বাড়িতে যান।
গ্রাম পুলিশ সনাতন মন্ডল জানান, রানাকে তিনি বাড়িতে বসিয়ে রেখে বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমকে জানান। রানা তার বাবা সলেমান গাজীকে মোবাইলে অবহিত করলো রাত ৮টার দিকে সলেমান গাজী তার বাড়িতে আসেন। কোনকিছু শোনা বোঝার আগেই মেহগণি কাঠের বাটাম দিয়ে ওই বাড়িতে অবস্থানকারি কৃষ্ণপদ ঢালী, তার মেয়ে চন্দ্রিমা ঢালী ও প্রতিবেশী ফুলমতি গোলদারকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন সলেমান, রানা ও মোহাম্মদ মোড়ল। স্থানীয়রা ছুঁটে এলে হামলাকারিরা পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা গুরুতর জখম তিনজনকে রাত সোয়া ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ঘটনার বিস্তারিত তিনি খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুর রহমান ও কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক আইয়ুব আলীকে জানান।
এদিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দুইজন দায়িত্বশীল কর্মী জানান, বুধবার সোয়া ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে কৃষ্ণপদ ঢালী, চন্দ্রিমা ঢালী ও ফুলমতি গোলদারকে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আঘাতের ফলে চন্দ্রিমা ও ফুলমতি এর মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকের মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষ্ণপদ ঢালীর বাম কপালের উপরে মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলেক কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তার ডান কাঁধের কলার বন ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় এক্সরে করতে বলা হয়েছে।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কর্মকর্তা মমিনুর রহমান জানান, এ ঘটনায় কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড