সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালকে দেশের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন একটি জলপথ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। খাল পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক সেখানে রোপন করা হবে বিভিন্ন ধরনের দুই সহস্রাধিক ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ। খালের ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার করে নিশ্চিত করা হবে পানির প্রবাহ। প্রয়োজনীয় সংষ্কার শেষে পর্যায়ক্রমে খালের দুই পাড়ে ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করার পাশাপাশি প্রাণ সায়েরের সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রাণ সায়ের খাল সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ উদ্যোগের কথা জানান জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। সভায় খাল সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রাণ সায়ের খাল সাতক্ষীরার একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। আমরা এ খালকে দেশের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিনন্দন জলপথে পরিণত করতে চাই। আমরা প্রথম ধাপে খাল সংস্কার কর্মসূচির গ্রহণ করেছি। পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে একযোগে প্রাণ সায়ের খালের দুই পাড়ে ২ হাজার বিভিন্ন প্রজাতীর ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হচ্ছে। কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, পরিবেশবিদ, শিক্ষার্থী এবং সেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোকে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মাসরুবা ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন, জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার, সাবেক পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী, সাতক্ষীরা জেলা জামাতের নেতা নুরুল হুদা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ, সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরা জেলার পৌর এলাকার প্রাণ কেন্দ্রে ১৮৬৫ সালে তৎকালিন জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী শহরের পানি নিষ্কাশন এবং নৌ-চলাচলের জন্য এল্লারচর নামক স্থান হতে একটি খাল খনন শুরু করেন। যা সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মরিচ্চাপ নদী এবং নৌখালি খালকে সংযুক্ত করেছে। খালটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ২০০ মিটার। পরবর্তীতে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নামেই খালটির নাম হয় প্রাণসায়ের খাল। খালটি শহরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বহু বছর ধরে খালটি দখল ও দূষণের শিকার। ২০২০ সালে প্রায় ১০ কোটি ব্যয়ে খালটি খনন করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু চার বছর না যেতেই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয় খালটি। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শহরের পানি প্রাণসায়ের দিয়ে প্রবাহিত হতে না পেরে পৌর শহরের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখনো জলমগ্ন হয়ে আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম