জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে। এরপর আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মৃত্যু, গ্রেপ্তারে বদলে গেছে আন্দোলনের ধরন ও কর্মসূচি।
সবশেষ শনিবার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এদিন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন। এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে শাহবাগে। রোববার (৪ আগস্ট) অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
তবে আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা গল্প, গুজব, অসত্য তথ্য ছড়াতে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়ে। শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের রাতভর শাহবাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান, শাহবাগে অবস্থান, আন্দোলনকারীদের টাকাসহ গ্রেপ্তার ছাড়াও অনেক গুজব প্রচার হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুক পোস্টে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ‘৭ মিনিটে পরিস্কার’ এর পোস্টও দেখা যায়। তবে বাস্তবে এগুলোর কোনো সত্যতা মেলেনি।
গুজব— শাহবাগ ও টিএসসিতে সারারাত শিক্ষার্থীদের অবস্থান
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার সন্ধ্যার পরপর রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অবস্থান করে মিছিল ও স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা রাত আনুমানিক ৯টার দিকে শাহবাগ ত্যাগ করে। তবে রাতভর গুজব চলে, ‘শিক্ষার্থীরা শাহবাগ ও টিএসসিতে অবস্থান করছেন। সরকারের পদত্যাগের পর তারা ঘরে ফিরবে’। এমন পোস্ট দেখার পর রাত ৩টার দিকে শাহবাগ ও টিএসসিতে গিয়ে কোনো জমায়েত দেখা যায়নি।
গুজব— সমন্বয়ক সার্জিসের বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার
রাতে বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক আইডিতে কয়েকটি এক হাজার টাকার বান্ডিলের ছবি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা সার্জিসের বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব-১০। তবে যাচাই করে দেখা যায়, যে ছবিটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে সেটি কয়েকদিন আগে এক তরুণী একটি গ্রুপে পোস্ট দেন। পোস্টে লেখা ছিল, ‘আব্বুর পেনশনের টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিলাম।’
এছাড়াও র্যাবও এমন কোনো অভিযানের কথা নিশ্চিত করেনি
তারকা ও ইউটিউবারদের ছবি দিয়ে ভুয়া পোস্ট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার রাতভর দেশের পরিচিত ইউটিউবার, ইনফ্লুয়েন্সার ও অভিনেতাদের নামে ছবিসহ ভুয়া পোস্ট করা হয়। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খান, অভিনেত্রী কাজলের ছবি দিয়ে পোস্ট করা হয়, ‘কোটা আন্দোলনের পাশে ছিলাম, এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পাশে নাই’। টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ও ইউটিউবার রাফসান দ্যা ছোট ভাই -এর ছবি দিয়েও একই কথা পোস্ট করা হয়।
তবে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে গিয়ে এধরনের কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।
গুজব— রাতেই দেশ ছাড়ছেন কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা
বেশ কয়েকটি গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়, রাতের মধ্যে দেশ ছাড়ছেন কোটা আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাদের দেশ ছাড়তে দেবেন না। ১ দফার হিসাব বাকি আছে।
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফ্যাক্ট চেকাররা বলছেন, শনিবার রাতভর গুজবের রাত ছিল। তবে কোনো গুজবেরই সত্যতা পাননি তারা।
খুলনা গেজেট/এএজে