উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিসহ বিশ্ব রাজনীতির জটিল সমীকরণের মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। দু’দিনের সফরে ২২ এপ্রিল বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ওই অতিথিকে রাজসিক আয়োজনে বরণে প্রস্তুত ঢাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৫ সালে বর্তমান আমীরের পিতা (তৎকালীন আমীর) হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। দুইদশকে পরিবর্তিত বাংলাদেশে কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের এটাই প্রথম সফর। অবশ্য গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিধিদের সিরিজ সফর হয়েছে দোহায়। বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা তথা হৃদ্যতার প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে আরব লীগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছিল রিয়াদ। কিন্তু বাংলাদেশ সেই চাপে ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ থেকে এক চুলও নড়েনি। বরং ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাতারের বিভিন্ন সংকটে যতোটা সম্ভব পাশে ছিল বাংলাদেশ।
ফলে দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট। ওই কর্মকর্তার মতে, সেই বিবেচনায় গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কাতারের শীর্ষ নেতার এ সফর দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ইরান-ইসরায়েলের সামপ্রতিক সংঘাতের আবহে শেখ তামিমের ঢাকা সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। কাতারের আমীরের দুইদিনের সফরের প্রস্তুতি হিসেবে ১৫ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সমন্বয় সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সফরের নানা বিষয়ের পাশাপাশি কয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে, তা চূড়ান্ত হয়েছে। কাতার আমীরের সফরে এখন পর্যন্ত ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের আলোচনা পাকাপোক্ত হয়েছে জানালেও এক কর্মকর্তা বলেন- শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম ৮টি ডকুমেন্ট সই হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে সইয়ের তালিকায় থাকা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হয়ে থাকে। জানা গেছে, সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির মধ্যে আছে- ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে সইয়ের তালিকায় থাকা সম্ভাব্য এমওইউ’র মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ততা, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ।
খুলনা গেজেট/এইচ