লোভনীয় চাকরির কথা বলে বিদেশে পাঠিয়ে মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়ে নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিদেশে মাফিয়াদের হাতে আটকে পড়া ব্যক্তিকে উদ্ধার ও মানব পাচারকারী দালাল চক্রের হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সংবাদ সম্মেলনে করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
শনিবার (০২ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় পৌর শহরের রাজনগরে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন। লিবিয়ায় আটক মো. আতাউর রহমান জীবননগর পৌর সভার রাজনগর পাড়ার বাসিন্দা। তিনি নারায়ণ পুর মোড়ে সেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিবিয়ায় আটকে থাকা আতাউর রহমানের স্ত্রী মোছা.জোসনা খাতুন লিখিত অভিযোগে করে বলেন, আমার স্বামী আতাউর রহমান জীবননগর বাজারে একজন সেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার রঘুনাথপুর গ্রামের রহম আলীর ছেলে মানবপাচারকারী নোয়াব আলী(৪০), জীবননগর বাজার পাড়ার তাজিম হোসেনের ছেলে শাহিন হোসেন(২৫) ও নারায়ণ পুর মোড়ের আত্তাব হোসেনের ছেলে ওসমান আলী পরস্পর যোগসাজসে আমার স্বামীর পিছনে লেগে থাকে। তাকে ফুসলিয়ে বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে চার লাখ ৩০ হাজার টাকা বিনিময়ে ১০ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১০টার সময় আমার বাড়ি থেকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেয়।সেই সাথে তারা এই প্রতিশ্রুতি প্রদান করে যে, আমার স্বামীকে তারা চুলকাটা সেলুনের কাজ দেবে। তার বেতন দেওয়া হবে মাসিক বাংলাদেশী টাকায় ৫০হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু বিবাদীরা সেখানে আমার স্বামীকে কোন কাজতো দেয়ইনি, উপরন্তু তাকে সেখানে অজ্ঞাত স্থানেে আটকে রেখে আরো চার রাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করছে। ইতিপূর্বে বিবাদীরা কৌশলে আমাদের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অপরদিকে আমার স্বামী লিবিয়ায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলখানায় এক মাস জেল খেটে বের হন। বিবাদী শাহিনের পিতা তাজিম হোসেন বর্তমানে লিবিয়ায় অবস্থান করছে।
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায় আমার বিশ্বাস পাচারকারীরা পরস্পর একটি মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর নামে কৌশলে লিবিয়ায় নিয়া দফায় দফায় আমাদের নিকট হইতে টাকা আদায় করছে।বিবাদীরা আমাকে বলিতেছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে আমার স্বামীকে তাহারা মুক্ত করিয়া দিবে। অন্যদিকে আমার স্বামীকে জিম্মি করিয়া তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা তাকে বাধ্য করে তাকে দিয়ে বলাইতেছে তাকে লিবিয়ায় আটকাইয়া চার লক্ষ টাকা তাদের পুনরায় দিতে হবে। ওই টাকা না দিলে তাকে সেখানে মেরে ফেলিবে বলে কান্নাকাটি করে মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাদের জানায়। এমতাবস্থায় আমি আমার স্বামীর জীবন শঙ্কার মধ্যে আছি। আমার ছোট দুইটা মেয়েদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি অবিলম্বে আমার স্বামীকে দেশে ফেরত আনতে চাই। সেই সাথে মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি ইতিমধ্যে গত ২৮ নভেম্বর জীবননগর থানায় এ ব্যাপারে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি,কিন্তুু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন আশ্বাস বা কোন ধরনের বিচার পাইনি।
ভুক্তভোগীর মেয়ে জামাই আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এবং আমার শ্বশুরকে নির্যাতন করে মোবাইলের মাধ্যমে শুনিয়ে টাকা দাবি করছে। এমতাবস্থায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করলে নোয়াব আলী আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ভয় দেখান। আমরা আইনের আশ্রয় নেওয়াতে আমার শ্বশুরকে প্রাণনাশের হুমকি প্রধান করেন।
জীবননগর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।অভিযোগের ভিক্তিতে অভিযুক্তদের একজনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি দু’চার দিন সময় নিয়েছেন।এই সময়ের মধ্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/কেডি