সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পিতার শেষ সম্বল ২০ শতক কৃষি জমি বিক্রির টাকা আর স্থানীয় সমিতি থেকে নেয়া ঋণ কুড়িয়ে কুয়েতে গিয়েছিল গাজী সোহাগ। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে চোখে-মুখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমালেও অপূর্ণই রইল তার আশা। সোনার হরিণের খোঁজে পেট্রো ডলারের দেশে পাড়ি দেয়ার চার বছরের মাথায় কফিনে মোড়ানো অবস্থায় স্বজনদের কাছে ফিরতে হলো তাকে।
গত ১৩ এপ্রিল কুয়েত সিটিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মৃত্যুবরণের পর বুধবার (১৯ এপ্রিল) তার লাশ দেশে পৌঁছেছে। সংসারের অভাব দূর করতে প্রবাস জীবন বেছে নেয়া সোহাগের অকাল মৃত্যুতে অথৈ সাগরে ডুবতে বসেছে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা। একমাত্র পুত্রকে হারানোর শোকে হত বিহবল অসহায় পরিবারটি এখন ঋণ শোধ নিয়েও মহাবিপাকে। বুধবার মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্ট হয় সেখানে। বুধবার জোহরের নামাযের পর জানাযা শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গাজী সোহাগ (২৫) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আব্দুর রহিমের ছেলে।
সোহাগের পিতা আব্দুর রহিম জানান, সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে শেষ সম্বল জমি বিক্রিসহ কয়েকটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ইচ্ছাতে তাকে কুয়েত পাঠিয়েছিলেন। গত চার বছরে কিছু ঋণ শোধ করতে পারলেও অদ্যবধি সম্পূর্ণ ঋণমুক্ত হতে পারেননি তিনি। ১৩ এপ্রিল ইফতারির পর নিজ কক্ষে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর প্রবাস কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ছেলের মৃতদেহ বুঝে পেয়েছেন তিনি।
ক্রন্দনরত আব্দুল রহিম আরও জানান, তার দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাদের সংসার ছিল। অভাব দূর করতে যেয়ে অকালে এভাবে তার পুত্রের চলে যাওয়ার পর তারা আরও বেশী অসহায় হয়ে গেছেন। নামমাত্র বসতভিটা ছাড়া আর কিছু না থাকায় ঋণ কুড়িয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠানো টাকা পরিশোধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ছেলের মৃত্যু সংবাদের পর থেকে তার স্ত্রী শয্যাসায়ী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় নুরনগর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান বখতিয়ার আহমেদ জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারটি আরও বিপদে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ তাকে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম