মানুষ বানাইলা বিধি
দিয়ে সেরা মান,
দিনে দিনে সেই মান
হইলোরে খান খান।
জাতিভেদে ধর্মভেদে
হইলো হাজার ভাগ,
মানুষ নামেতে ফেলে
কলংকেরই দাগ।
সোনামুখের দেশের কথা
একটাইতো দুনিয়া,
জাত বিচারের ঠাঁই হবেনা
এই কথা যাও শুনিয়া।
সবার উপর সত্য মানুষ
সার কথাটি ভুলনা,
ওরে মানুষ তোমায় বলি
তুমিই তোমার তুলনা।
(অনুবাদ : অধ্যাপক অসিতবরণ ঘোষ)
THE GOLDEN LAND
The Lord made man,
Giving him the highest dignity.
But the honour lies shattered now.
What a wastage! What a pity!
Races and religions quarrel and clash,
And create violence and enemy.
The clergy show their red eyes,
And leave scars of infamy.
But the land of Sonamukh
Believes in one world, anyway,
Where the wind and the streams
Words of unity and love convey.
Man is the towering truth.
Forget not this gem of a view
Hearken, oh Man! You are worth
Comparing with none but you.
উপরের গানটি ছিল আমার লেখা ‘সোনামুখের দেশে’ নাটকের মূল বিষয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘নাটুকে সোনামুখ’ দলের এক ঝাঁক তরুণ নাট্যশিল্পীরা নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিল। ২০১২ সালে এই নাটকটি জাতিসংষ মিশনে (দারফুর, সুদান) মঞ্চস্থ করতে গিয়ে গানটির ইংরেজি অনুবাদ জরুরী হয়ে পড়ে। আমার স্বল্প ইংরেজি বিদ্যা খাটিয়ে গানটির ইংরেজি অনুবাদ করে পড়ার পর নিজেই লজ্জা পেলাম। শেষমেশ সূদূর দারফুর থেকে শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক অসিতবরণ ঘোষ স্যারের সাথে কথা বললাম। এই নাটক ও গানের সাথে তিনি আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন। পুরা গান ও নাটকটি তিনি যত্ন সহকারে সংশোধন করে আমার কাঁচা হাত পাকা করতে অজস্র পরিশ্রম করে আমার নাটকটি জাতে উঠিয়েছিলেন। এই নাটকটি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বহুজাতিক বাহিনীর সম্মুখে মঞ্চস্থ হবে তা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। অবশ্য আমার মত আনাড়ি নির্দেশকের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চস্থ করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২০/২৫ জন সদস্য দীর্ঘদিন অজস্র পরিশ্রম করেছিল। আমাদের ব্যাটেলিয়নের সিও জনাব দীন মোহাম্মদ সার্বিক সহায়তা দিয়ে সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপভোগ্য করে তুলেছিলেন। এই নাটকের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানবতা ও মানবধর্ম। উপস্থিত সকল দেশের দর্শক নাটকের মর্মার্থ বুঝে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা চেতনার ভূয়সী প্রশংসা করেছিল।
The Golden Land শিরোনামে এই গানটি জাতিসংষ বুলেটিনে ছাপা হয়েছিল। অবশ্য, সেখানে লেখক হিসেবে আমার নাম এসেছিল। অনুবাদক হিসেবে শ্রদ্ধেয় অসিতবরণ ঘোষ স্যারের নাম থাকাই উচিৎ ছিল। কিন্তু জাতিসংঘ বুলেটিনে বাংলার কোন স্থান না থাকায় শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় আমার নামে ছাপা হওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টি আমি স্যারের কাছে জানিয়েছিলাম।
কথাগুলো বলার অনেক কারণ আছে। আমরা যে যেখানে যে কাজ করি না কেন, তার ভিতরে যদি মানবিক আদর্শ না থাকে তাহলে সকল কাজ মূল্যহীন। জীবনটাই এক প্রকার অর্থহীন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। কিন্তু যেকোন পেশায় মানবিক দিক থাকলেই সেই মানুষ সার্থক; পেশাও হয়ে ওঠে সেবাধর্মী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- যেকোন মানুষ, যেকোন পেশায় মন থেকে চাইলেই সারা জীবনে অনেক ভাল কাজ করতে পারে।
পুলিশের পেশা ঠিক এমনই একটি মহান পেশা। যেখানে মন থেকে চাইলেই সারাজীবনে অনেক মহৎ কাজ করা সম্ভব (পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে)। আবার ইচ্ছে করলে সকল প্রকার খারাপ কাজও করা সম্ভব। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
আমি পুলিশের একজন মাঠ পর্যায়ের সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে নানান ধরনের চড়াই উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছি। সারাটা কর্মজীবনের নানাবিধ ঘাত প্রতিঘাত, সুখ দুঃখের হাজারো স্মৃতি মনের জানালায় উঁকি দেয়।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে মাঠ পর্যায়ে পুলিশের পক্ষে স্বাধীনভাবে সেবাদান করা এতটা সহজ কাজ নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পুলিশের বাইরে থেকে সমালোচনা করা যতটা সহজ, ভিতরে গিয়ে স্বাধীনভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ভাল কাজ করা ঠিক ততটাই কঠিন। আমার দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাটি বললাম।
আমার পুলিশ জীবনের নানান সুখ দুঃখের মধ্যে দুঃখের স্মৃতি বাদ দিয়ে শুধু সুখের স্মৃতিগুলো সকলের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরতে মন চায়। তাও আবার শুধুমাত্র আমার পুলিশ জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা এমন কিছু খন্ডচিত্র যা আমার মনকে আন্দোলিত করে।
পুলিশী দায়িত্বের সাথে সাথে কিছু কিছু মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা ছিল আমার জীবনের ব্রত। সেইসব খন্ড খন্ড সুখ দুঃখের স্মৃতি তুলে ধরার মানসে এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আমার লেখাগুলি সম্পূর্ণ অতীতের অলিখিত স্মৃতি থেকে সংগৃহীত। তাই, স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কোথাও যদি সামান্য এদিক ওদিক হয় তা একান্তই অনিচ্ছাকৃত। (চলবে)
লেখক : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অব.)
খুলনা গেজেট / আ হ আ