দীর্ঘ ৭ বছর পর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার নির্বাচন। নগরীর সাতরাস্তা মোড়ের বিএমএ মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ২৪ টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯ জন প্রার্থী। মোট ভোটার ২ হাজার ১৭৮ জন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতারা পৃথক দুটি প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপির সমর্থিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের চিকিৎসকরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
নির্বাচনে বিএমএর বর্তমান সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের নেতৃত্বে ডা. বাহার-ডা. তরুণ পরিষদ এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজের নেতৃত্বে ডা. হামিদ আসগর-ডা. মেহেদী নেওয়াজ পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই প্যানেলের ৪৮ জনের বাইরে সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন ডা. মামুনুর রশীদ।
নির্বাচনের আগের দিন বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে ডা. বাহার-তরুণ পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুপুরে একটি রেস্তোরায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি আরেকটি প্যানেলের প্রার্থীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্রের সমর্থন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাদের এই অবিবেচক বাসনার ফলে নির্বাচনে অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচনে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের যে আশংকা দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ওপর প্যানেলের প্রার্থীরাও ভোটারদের হয়রানি, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত অপর প্যানেলের সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার চলছে। নির্বাচন বন্ধেরও ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। চিকিৎসকদের মতো সম্মানিত গোষ্ঠীর এই নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ ও সুন্দর হয়-সে জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক চিকিৎসক খসরুল আলম মল্লিক বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পযাপ্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আশা করা যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হবে।
বিএমএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিএমএ’র সবশেষ দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও দীর্ঘদিন নির্বাচন হয়নি। অবশেষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বৈঠক করে তারা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। এতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যায়।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা
ডা. কাজী হামিদ আসগর-ডা. মেহেদী নেওয়াজ পরিষদের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে ডা. কাজী হামিদ আসগর, সহ-সভাপতি পদে ডা. গাজী মিজানুর রহমান, ডা. সামসুল আহসান মাসুম ও ডা. মোল্লা হারুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. কুতুব উদ্দিন মল্লিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. বঙ্গ কমল বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ডা. ইউনুচ উজ জামান খান তারিম, দপ্তর সম্পাদক পদে ডা. এস এম তুষার আলম, প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক পদে ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. উৎপল কুমার চন্দ, সংস্কৃতি ও আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. শহিদুল ইসলাম মুকুল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ডা. মুহিবুল হাসান লিংকন, প্রকাশনা ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে ডা. পলাশ কুমার দে প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া এই পরিষদে কার্যকরী সদস্য পদে ডা. পরিতোষ কুমার চৌধুরী, ডা. ডলি হালদার, ডা. প্রিতিশ তরফদার, ডা. পার্থ প্রতীম দেবনাথ, ডা. প্রকাশ দেবনাথ, ডা. চম্পক, ডা. কাজী আবু রাশেদ, ডা. রকিব, ডা. ফিরোজ ও ডা. মেহেদী হাসান সৈকত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ডা. বাহার-ডা. তরুণ পরিষদের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম, সহ-সভাপতি পদে ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ, ডা. দিদারুল আলম শাহীন ও ডা. সুফিয়ান রুস্তম, সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ডা. সুমন রায়, দপ্তর সম্পাদক পদে ডা. অনল রায়, প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক পদে ডা. সাইফুল্লাহ মানসুর, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. দেবনাথ তালুকদার রনি, সংস্কৃতি ও আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. সোহানা সেলিম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ডা. ফিরোজ হাসান, প্রকাশনা ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে ডা. বাপ্পারাজ দত্ত প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য পদে ডা. ধীরাজ মোহন বিশ্বাস, ডা. হিমেল সাহা, ডা. নিরুপম মন্ডল, ডা. কমলেশ সাহা, ডা. উপানন্দ রায়, ডা. মিথুন পাল, ডা. মেহেদী হাসান, ডা. ফয়সাল আহমেদ, ডা. প্রিতম স্বাক্ষর ও ডা. আওরঙ্গজেব প্রিন্স প্রার্থী হয়েছেন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়