২০১৩ সালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যাওয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, এই বাসার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেলে দেখতে ভালো লাগত।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কত মানুষ গুম হয়, সেটি দেশটির গণমাধ্যম সিএনএনে দেখেছেন জানিয়ে আমেরিকার কর্মকর্তার কাছে সংখ্যাটি জানতে চান ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
বুধবার বিকেলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনায় পিটার হাসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা ওঠে।
আলোচনায় সভাপতি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাহেব আজকে ভোরবেলায় বুদ্ধিজীবী দিবসে সাজ্জাদুল সুমনের বাড়িতে গেলেন। ২০১৩ সালে গুম হয়েছিল। তার বাড়িতে উনি গেলেন, আমি সবিনয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে কতজন গুম হয়, সেই চিত্রটা কিন্তু সিএনএনে আমরা দেখেছি। কতজন ধর্ষিত হয় নারী, সেটাও আমরা দেখেছি। কতজন খুন হয় সেই চিত্রও আমরা দেখেছি।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পিটার হাসের মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে না যাওয়ার সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘পিটার হাস সাহেব, আপনি বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর…যদি দেখতাম আপনি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেছেন সেই চিত্রটা বেশি ভালো লাগত। কিন্তু উনি চলে গেছেন সুমনের বাড়িতে।’
সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা যে গুমের অভিযোগ আনে, সেটি যে অসার, তা বোঝাতে কয়েকটি উদাহরণও দেন কাদের।
২০১৩ সালের ৫ মে রাতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের উচ্ছেদের পর যে গুজব ছড়ানো হয়েছিল, সে বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘বলা হলো ৬৭ জনকে গুম করে, খুন করেছে শেখ হাসিনার সরকার। পরে সাংবাদিকরা তদন্ত করে দেখল, এদের অধিকাংশ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে, সেই অবস্থায় এদের ছবি তুলেছে। আজকে এই যে ৬৭ জন, এরা কি গুম হয়েছে? এরা গুম হয়েছিল?’
কবি ফরহাদ মজহার ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘যারা গুম নিয়ে কথা বলেন তাদের বলব, ফরহাদ মাজহার সাহেব নাকি গুম। কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেল, উনি খুলনা অভিমুখে বাসে। নিজে নিজেই চলে গেছেন। এটা কি গুম? এসব ঘটনা অনেক আছে।’
খুনের মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেকে নিজেই নিখোঁজ হচ্ছে বলেও দাবি করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। বলেন, ‘মামলা হয়েছে খুনের, মাদকের। এখন নিজেই নিজেকে নিখোঁজ করেছে। বিএনপির এ রকম অসংখ্য কর্মী আছে। মামলা থেকে রক্ষা পেতে নিখোঁজ।
‘চকরিয়ার সালাহউদ্দিন (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য), কত অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গুম হয়ে গেলেন। নিজে নিজেই চলে গেলেন ইন্ডিয়া। এসব গুমের কাহিনি আপনাদের জানা উচিত মিস্টার পিটার হাস।’
বিরোধীদের নিষেধাজ্ঞার মিশন ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাবেন বাংলাদেশের ওপর। মিশন ফেইলড, আমীর খসরুর ওয়াশিংটন মিশন। নিষেধাজ্ঞা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০ দেশের ৭০ জনের বিরুদ্ধে। সেখানে বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ কিন্তু নেই। তবুও লবিস্ট নিয়োগ করে।’
বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে দূতিয়ালি করতে বিএনপি প্রতিনিধি পাঠিয়েছেলি বলেও অভিযোগ কাদেরের। বলেন, ‘আমীর খসরু একা যাননি, লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা। তার নাম কি জানেন? টোবি ক্যাডম্যান। তিনি ব্রিটিশ আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের একজন আইনজীবী, তিনি লবিস্টের কাজও করেন।
“তিনি (টোবি ক্যাডম্যান) সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, পুলিশ এবং র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র কথা রেখেছে, যুক্তরাজ্য আমার অনুরোধ রাখেনি’।”
বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করছে অভিযোগ করে তাদের অর্থের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘টাকাপয়সা দিয়ে এসব করছেন, কোথা থেকে আসে টাকা? কারা দেয় টাকা, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, সব খবর আসে।’
খুলনা গেজেট/ বিএমএস