খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  দক্ষিণ কোরিয়ায় নৌ-বাহিনীর প্লেন বিধ্বস্ত, বেঁচে নেই আরোহীদের কেউ
  বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদে দায়িত্ব নিলেন সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুল
  নেচার ইনডেক্সের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০-এ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
  ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে জাপানের আরও বিনিয়োগ চান প্রধান উপদেষ্টা
টার্গেট ছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতারা

সুব্রত বাইন ও তার বাহিনীকে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা ফাঁস

গেজেট ডেস্ক

রাজধানীসহ সারা দেশে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা ছিল সুব্রত বাইন ও তার বাহিনীর। তাদের টার্গেটে ছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। উদ্দেশ্য ছিল অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা। এ ষড়যন্ত্রের পেছনে রয়েছেন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। এ পরিকল্পনার প্রধান সহযোগী ছিলেন তার শিষ্য আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ।

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পাঠানো হয় তাদের বাহিনীর কাছে। ওই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় শ্যুটার ও কিলারদের সংগঠিত করছিল সুব্রত বাইন বাহিনী। মঙ্গলবার রাতে হাতিরঝিল থানায় হস্তান্তরের পর গোয়েন্দা হেফাজতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র মামলায় সুব্রত বাইনকে ৮ দিন ও অপর তিনজনকে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশের আবেদনে বুধবার এ অনুমতি দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত।

সুব্রত বাইন ছাড়া অপর আসামিরা হলেন-আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত ও এমএএস শরীফ।

এদিন সুব্রত বাইনসহ চার আসামিকে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। তাদের রাখা হয় সিএমএম আদালতের হাজতখানায়। বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে কঠোর পুলিশ প্রহরায় তাদের আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।

এ সময় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতকড়া পরানো ছিল। পরে কাঠগড়ায় নিয়ে তাদের হেলমেট ও এক হাতে হাতকড়া খোলা হয়।

রিমান্ড শুনানি শুরুর আগে আদালতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সুব্রত বাইন বলেন, ‘সত্য কথা লিখবেন। আমি যা তাই লিখবেন। আমারও তো পরিবার আছে। কিন্তু আমি ১৯৮৭ সাল থেকে কোনো প্রতিবাদ করিনি।

সাংবাদিকরা এত খবর রাখেন, আড়াই বছর আগে আমায় আয়না ঘরে রাখে, সেই খবর নাই। ২০২২ সালে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আয়নাঘরে রাখা হয় জানিয়ে বলেন, সেখানে রড দিয়ে পিটিয়েছে। ৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে তাকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। নিজে বাঁচার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখেন বলে জানিয়ে সুব্রত বলেন, ‘কে মরতে চায়।’

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

তিনি বলেন, আসামিরা খুবই আলোচিত। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও কারা জড়িত এবং অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দশ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, সুব্রত বাইন আজকে মিডিয়ার সৃষ্টি। চারদলীয় জোট সরকার এই লিস্ট করে। এরপর আর কোনো সরকার কোনো লিস্ট করেনি। এই আসামিকে ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ তারিখে নরসিংদীর ভুলতা এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায়।

রিমান্ড আদেশের পর সুব্রত বাইন আদালতকে বলেন, আমার নামাজ যেন কাজা না হয়।’ তখন আদালত পুলিশকে ‘বিষয়টি’ দেখতে বলেন।

এদিকে, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কি তথ্য পাওয়া গেল-জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে লোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ত্র-গুলি ও টাকার উৎস জানার চেষ্টা চলছে। এলাকাভিত্তিক তাদের সদস্যদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের নেওয়ার পর চারজনকে আলাদা করে ফেলা হয়। প্রথমে শ্যুটার আরাফাত ও শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলির বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে। অস্ত্র ও গুলি সীমান্ত থেকে সংগ্রহের পর তারা আরাফাত ও শরীফের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ওই অস্ত্রগুলো মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ওই সন্ত্রাসীরা ৫ আগস্টের পর সুব্রত বাইন ও মাসুদের দলে যোগ দেয়। এলাকাভিত্তিক ওইসব সন্ত্রাসীর তালিকা অনেক বড়। তবে তাদের নাম পুলিশের খাতায় নেই। তারা সবাই উঠতি বয়সি এবং এলিট শ্রেণির বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।

অপরদিকে, শ্যুটার আরাফাত ও শরীফের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দারা বাইন ও মাসুদের মুখোমুখি হন। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে নেমেছিল বলে জানান তারা। টার্গেট কিলিংয়ের পর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে এক দলের নেতাকে অন্য দলের নেতারা খুন করেছে বলে তা প্রচার করারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। টার্গেটকৃত তিন দলের (বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি) ভেতর রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হলে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে বলে তাদের ধারণা ছিল। আর এজন্য প্রতিবেশী একটি দেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অস্ত্র-গুলি ও ক্যাডারদের জন্য টাকাও পাঠাত ওই নেতারা। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো। হুন্ডির টাকা বেশিরভাগই লেনদেন হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সীমান্তে। এজন্য তারা কুষ্টিয়ায় আস্তানা গেড়েছিল বলেও গোয়েন্দারা জানান। কুষ্টিয়া থেকে তারা ঢাকায় বেশ কয়েশ অস্ত্র তাদের ক্যাডারদের কাছে পাঠিয়েছেন বলেও স্বীকার করেন। ওইসব ক্যাডারদের তালিকা ধরে অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তারে ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে।

বিএনপির সমর্থক হয়েও কেন আওয়ামী লীগের মিশনে নেমেছিলেন-গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নে সুব্রত বাইন জানান, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তার নাম প্রথমদিকে রাখা হয়। এ কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তার ঘনিষ্ঠজনরাও ছিল বিপদে। ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা তাকে এড়িয়ে যান। এ কারণে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষ নেন এবং বিএনপিসহ সমমনাদের টার্গেট করেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!