খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ পৌষ, ১৪৩১ | ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৫
  বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায় আবারও ফেল সাকিব আল হাসান, এক বছরের জন্য বল করতে পারবেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে
  নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন: সিইসি

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মুখোমুখি ১২ বিচারপতি

গেজেট ডেস্ক

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অন্তত এক ডজন বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা অভিযোগের তদন্ত চলছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ‘বর্তমানে বেশ কয়েকজন বিচারকের আচরণ সংক্রান্ত প্রাথমিক তদন্ত চলছে এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।’ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ‘নিউজ আপডেট’ স্ক্রলে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে এই ১২ বিচারপতি ছুটিতে রয়েছেন। গত ১৬ অক্টোবর এসব বিচারপতি ছুটিতে যান। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তাদের ছুটি শেষ হবে। তবে এরই মধ্যে তাদের অনেকেই ছুটি বাড়াতে ফের আবেদন দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। এই ১২ বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন।

‘দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ অথবা তাদের অপসারণের দাবিতে গত ৭ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়া, অর্থাৎ বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পরে এই বিচারপতিরা ছুটির আবেদন করলে তাদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়।

এরপর গত ২০ অক্টোবর আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ পুনর্বহাল হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন এবং কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতির তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমানের তথ্য জানানো হয়।

জানা যায়, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট।

এই সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়। যার ৩ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সেক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন। কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।

৫ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থ্যতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন। আর ৭ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা ধারণ করবে।

জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযুক্ত বিচারপতিদের বিরুদ্ধে যদি পেশাগত অসদাচারণ বা আর্থিক বা মানসিক অসততার কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ আকারে দিতে হবে। কাউন্সিল তদন্ত করে দেখবে যে, তারা দোষী না নির্দোষ। এরপর কাউন্সিল আবার তাদের ফাইন্ডিংস রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে, সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের দুজন সিনিয়র বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। তবে অভিযোগ করতে হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতি অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠান।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ হয়তো সবসময় রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করতে পারেন না। আবার অনেক অভিযোগ আছে, যা সাধারণ মানুষের জানা নেই। সে কারণে কাউন্সিল স্বপ্রণোদিত হয়েও তদন্ত শুরু করে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে পারে।’

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তৎপরতা: ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে হাইকোর্ট বিভাগের সে সময়ের বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অসৎ উপায়ে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ সৈয়দ শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধ অসদাচরণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিষয়টি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে কাউন্সিল অভিযোগের সত্যতা পায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদচ্যুতির সুপারিশ করে। পরে রাষ্ট্রপতি তাকে পদচ্যুত করেন।

আরও দুটি ঘটনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই সংশ্লিষ্ট দুজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। আরেকটি ঘটনা হলো, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি লতিফুর রহমান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের ফোনালাপ একটি পত্রিকায় ফাঁস হওয়া। ঘটনাটি ক্যাসেট কেলেঙ্কারি নামে অধিক পরিচিত। পরে বিচারপতিকে দীর্ঘদিন বেঞ্চ থেকে সরিয়ে রাখা হয় এবং তিনি পদত্যাগ করেন।

এদিকে ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে দূরে রাখা হয়। তারা হলেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক। এই তিন বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বেশ কিছুদিন পর গত ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর ওইদিনই গৃহীত হয়। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে ছুটিতে পাঠানো হয়। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে এখন যাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!